সঠিক ভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লেখা কেন জরুরী?
আপনার এই আর্টিকেলে ক্লিক করা উচিত হয়নি। কারণ সঠিকভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লিখা খুব কঠিন একটা কাজ যা সবার দ্বারা হয় না। ঠাট্টা করছি!!! এটা আসলে খুবই সহজ, বিশেষত যখন আমাদের অর্থাৎ ‘Youthrider’ থেকে শিখবেন।
যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে, ই-মেইল সবজায়গায় ছাড়িয়ে পড়েছে। সবখানে এটা ব্যবহার করা হয়।
আপনি যেই ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করুন না কেন ই-মেইল আপনাকে ব্যাবহার করতে হতে পারে এবং একমাত্র ঈশ্বরই জানেন পুরো জীবনে কতবার আপনাকে এটা ব্যবহার করতে হবে।
এটা ব্যবহার করা সহজ ও বিনা মূল্যে মুহূর্তেই প্রাপকের কাছে পৌঁছে যায় বলে ই-মেইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা তুমুল হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ করোনা পরবর্তী বিশ্বে চাকরীর বাজারে এগিয়ে থাকার সেরা ৮ টি স্কিল
তাই, সঠিকভাবে ই-মেইল লিখার দক্ষতা থাকলে সেটা একটা সম্পদে পরিণত হবে। কিন্তু আপনাকে এখন থেকেই শেখা শুরু করতে হবে।
কীভাবে সঠিকভাবে পেশাদার ই-মেইল লিখতে হবে তার ধারণা দেওয়ার জন্য প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের টেকনিক আমরা নিচে তুলে ধরলাম।
# প্রফেশনাল ইমেইল একাউন্ট খোলা-
আমার প্রথম ই-মেইল এড্রেসটা ছিল এরকম: [email protected].
আমার খোলা দ্বিতীয় ই-মেইল এড্রেস: [email protected].
প্লিজ আমার উপর হাসবেন না কারণ আমি জানি আপনাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা এখনো এরকম ই-মেইল আইডি ব্যবহার করে।
আপনার কি মনে হয় একজন HR ম্যানেজার ‘সিরিয়াল কিলার’ নামের আইডি থেকে আসা মেইল খুলে দেখবে? না, দেখবে না (যদি তার জীবনের ভয় থাকে)।
তাই প্রথম নিয়মটা হচ্ছে, ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খোলার সময় নিজের আসল নাম ব্যবহার করা। দ্বিতীয় নিয়মটা হচ্ছে, অর্থহীন ও লম্ব সংখ্যা এড়িয়ে চলা। যেমন, 00008,5566788 এর মতো সংখ্যা এড়িয়ে চলা উচিত।
আপনি চাইলে 123, 5656 এর মতো সংখ্যা ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ এমন সংখ্যা ব্যবহার করুন যা বোধগম্য ও সহজে পড়া যায়। প্রফেশনাল ইমেইল লেখার ক্ষেত্রে এগুলো অবশ্যই মাথাই রাখতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ-
সঠিক:
[email protected] or [email protected].
ভুল:
[email protected] or [email protected].
# প্রফেশনাল ইমেইল এর মৌলিক গঠন-
From –
এটা হচ্ছে প্রেরকের এড্রেস। সেটিং ঠিক থাকলে পিসি বা মোবাইল ফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এখানে আপনার ই-মেইল এড্রেস দেখাবে।
যদি আপনার একাধিক ই-মেইল থাকে তাহলে এই অপসানের মাধ্যমে সেখান থেকে যেকোনো একটা বেছে নিতে পারবেন।
To –
এটা প্রাপকের এড্রেস, মানে যে এড্রেসে আপনি ম্যাসেজ পাঠাতে চান। আপনি চাইলে এখানে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক এড্রেস বসাতে পারেন।
Cc and Bcc –
ধরুন আপনাকে ১০০ জন ব্যক্তিকে একই ই-মেইল পাঠাতে হবে। এখন আপনি কী করবেন? ১০০ বার সেই মেইল টাইপ করে ১০০ জনকে আলাদা আলাদা পাঠাবেন?
ভাবতেই ভয় লাগছে, তাই না? অবশ্যই, সেটা করা কষ্টকর হবে। এরকম পরিস্থিতিতে ‘cc’ এবং ‘bcc’ কাজে দিবে। Cc-র পূর্ণরূপ হচ্ছে ‘Carbon Copy’ এবং Bcc এর পূর্ণরূপ ‘Blind Carbon Copy’.
এই দুই ফাংশনের মাধ্যমে আপনি একই ই-মেইল একসাথে শতশত ব্যাক্তির কাছে পাঠাতে পারবেন। তাদের মাধ্যে একটাই পার্থক্য আছে: Cc এর প্রাপক আপনার ই-মেইলের অন্যান্য প্রাপকদের দেখতে পাবে কিন্তু bcc এর ক্ষেত্রে প্রাপক একে অপরকে দেখতে পাবে না।
উৎসবের শুভেচ্ছা, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ বা মিটিং ডাকার সময় এই দুই ফাংশন খুবই কাজে আসে।
অ্যাটাচমেন্ট (সংযুক্তি)
অ্যাটাচমেন্ট অপসানের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ফরম্যাটের ফাইল (Word, docx, Pdf, PowerPoint) বা ছবি সংযুক্ত করতে পারবেন।
তবে এখানে একটা মেমরি লিমিট আছে। যেমন জিমেইলের মাধ্যমে আপনি ২৫ মেগাবাইটের বড় ফাইল একবারে পাঠাতে পারবেন না।
প্রফেশনাল ইমেইল পাঠানোর সময় যেসকল বিষয় মাথায় রাখতে হবে:
১। ই-মেইল লিখার উদ্দেশ্য:
একটু থামুন। ই-মেইল লিখা শুরু করার আগে, একটু ভেবে দেখতে হবে। যে তথ্য পাঠাতে চাচ্ছেন তা আদৌ ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো উচিত হবে কি না।
এটা বলছি কারণ, কিছু কিছু তথ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে ভিন্ন মাধ্যমের প্রয়োজন হতে পারে। কখনো কখনো ফোন কল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাঠানো একটা ম্যাসেজ ই-মেইলের চাইতে বেশি কার্যকারী হয়ে উঠতে পারে।
তাই মেইল পাঠানোর আগে উদ্দেশ্যের কার্যকারিতা খুঁজে বের করতে হবে।
২। আপনার প্রাপক:
আপনি চাইলে একাধিক প্রাপকের নিকিট ই-মেইল পাঠাতে পারেন। এই প্রাপক হতে পারে আপনার বস, সহকর্মী, বন্ধু অথবা একটা প্রতিষ্ঠান।
বসকে পাঠানো ই-মেইলের ধরণ স্বভাবতই বন্ধুকে পাঠানো ই-মেইলের চাইতে ভিন্ন হবে। প্রাপকের সাথে আপনার কী সম্পর্ক তা মাথায় রাখুন।
বসের কাছে ই-মেইল পাঠানোর সময়, অপ্রয়োজনীয় কোনো কথা লিখবেন না এবং বিনয়ের সাথে লিখার চেষ্টা করুন।
৩। ই-মেইলের সাবজেক্ট বা বিষয়:
দুঃখিত, আমার এটা নিয়ে শুরুতেই কথা বলা উচিত ছিল। কারণ এটা ই-মেইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বেশিভাগ সময় ই-মেইলের সাবজেক্ট দেখে ঠিক করা হয় যে সেটাকে খুলে দেখা হবে নাকি এড়িয়ে যাওয়া হবে।
তাহলে আপনার ই-মেইলের জন্য সঠিক সাবজেক্ট কীভাবে নির্ধারণ করবেন? খুব সহজ। নিজেকে প্রশ্ন করুন কেন এই ই-মেইল লিখছেন।
তারপর নিজের উদ্দেশ্যকে সর্বোচ্চ ৪-৭ শব্দের মধ্যে নিয়ে আসুন। পেশাদার ই-মেইলের ক্ষেত্রে সাবজেক্ট লিখার এটাই সেরা পদ্ধতি।
৪। ই-মেইলের মর্যাদা:
ই-মেইল একটা যোগাযোগ মাধ্যম কিন্তু অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের তুলনায় এটা বেশ ফরমাল। তাই এটাকে সেভাবে ট্রিট করুন।
নিজের ম্যাসেজকে সুনির্দিষ্ট, সংক্ষিপ্ত ও সহজ করে লিখতে হবে। এমন কোনোকিছু লিখবেন না যার ফলে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল লিখার সময় ভুল করেও কৌতুক ও ব্যঙ্গাত্মক কিছু লিখতে যাবেন না। এরকম কিছু করলে প্রাপকের কাছে আপনার ই-মেইল মর্যাদা হারাবে।
৫। অভিবাদন/সম্বোধন ব্যবহার করা:
ভদ্র স্বভাবের মানুষকে কে না পছন্দ করে? সবাই করে। ই-মেইলের শুরুতে সম্বোধন/অভিবাদন ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার শিষ্টাচার ফুটে উঠবে।
যদি প্রাপক আপনার পরিচিত কেউ হয় তাহলে ‘Dear Mr. /Dear Mrs’ দিয়ে শুরু করতে পারেন। যদি বেশি জানাশোনা না থাকে তাহলে ‘Hello’ দিয়ে শুরু করতে পারেন।
তবে ভালো জানাশোনা থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও ‘Hello’ ব্যবহার করতে পারেন। বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে ইনফরমাল ই-মেইল লিখার সময় “Hi” অথবা সরাসরি তাদের নাম দিয়ে লিখা শুরু করতে পারেন।
৬। শেষের অংশ
পেশাদার ই-মেইল বা প্রফেশনাল ইমেইল সবসময় এন্ডিং স্টেটমেন্ট দিয়ে শেষ করা উচিত। এই এন্ডিং স্টেটমেন্ট হতে পারে, sincerely, best regards, yours most faithful ইত্যাদি।
কাকে উদ্দেশ্য করে মেইল লিখছেন তার উপর এটা নির্ভর করে। এরপর নিজের নাম লিখতে ভুলবেন না।
কিছু কিছু মানুষের কাছে এটাকে অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে কারণ আপনি শুরুতেই একবার নিজের নাম লিখেছেন। কিন্তু ই-মেইল শেষ করার আগে নিজের নাম লিখাকে ভদ্রতা হিসেবে ধরা হয়।
৭। আত্ম পরিচিতি
পেশাদার ই-মেইল বা পেশাদার ই-মেইল পাঠানোর সময় আত্ম পরিচিতি অর্থাৎ নিজের পরিচয় অবশ্যই দেওয়া উচিত। প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইলের শেষে নিজের স্বাক্ষর ব্যবহার করা উচিত।
এখানে আপনার নাম, পদবি, ই-মেইল এড্রেস বা ফোন নাম্বার উল্লেখ করলে প্রাপক সহজেই আপনার পরিচয় বুঝতে পারবে। এটা করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিটা হচ্ছে, সেটিংসে গিয়ে প্রতিটি ই-মেইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচয় যুক্ত করার অপশন চালু করে দেওয়া।
সংশোধন করা:
ফরাসি দার্শনিক ব্লেইজ প্যাসকাল বলেছিলেন:
“যদি আমার হাতে আরো সময় থাকতো, আমি আরও সংক্ষিপ্ত চিঠি লিখতাম।”
ব্লেইজ প্যাসকাল
একটা ভুলে ভরা দীর্ঘ ই-মেইল লিখার চাইতে সংক্ষিপ্ত ও নির্ভুল ই-মেইল লিখা বেশি মুস্কিল। যেকোনো যোগাযোগের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হওয়াটা জরুরি।
তাই সেন্ড বাটনে ক্লিক করার আগে অন্তত দুইবার পুরোটা পড়ে দেখা উচিত। ব্যাকরণগত ও বানানগত ভুল আপনাকে প্রাপকের নিকট হেয় করে তুলবে এবং এর ফলে আপনার ইমপ্রেশন একেবারে মাঠে মারা যাবে। তাই এসব ক্ষেত্রে যত্নশীল হওয়া উচিত।
প্রযুক্তি নির্ভর আজকের এই যুগে পেশাদার জীবনের প্রায় অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই ই-মেইল।
Statista এর ২০২০ সালে করা এক জরিপে দেখা গেছে , দৈনিক ই-মেইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩.৮ বিলিয়ন এবং ২০২৩ সালে এটা ৪.৩ বিলিয়নে গিয়ে ঠেকবে।
২৯৩.৬০ বিলিয়ন ই-মেইল প্রত্যেকদিন লেনদেন করা হয়। বেশিরভাগ ব্যবসা যোগাযোগ ও ক্রেতার নিকট পৌঁছানোর জন্য ই-মেইল ব্যবহার করে থাকে।
তাই বুঝতেই পারছেন ই-মেইল লিখার দক্ষতা থাকাটা কতোটা জরুরি হয়ে উঠেছে। কিন্তু হাতে কলমে আয়োজন করে পাতাতে লিখতে হয় না বলেই হয়তো অনেকে এটাকে তেমন গুরুত্ব দিতে চায় না।
তবে বিশ্বাস করুন একটি ই-মেইল যেকোনো লিখিত যোগাযোগের মতোই সমান গুরুত্ব বহন করে।
তাই আমাদের এটাকে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। প্রতিনিয়ত অনুশীলন করার মাধ্যমে আপনি পেশাদার ই-মেইল লিখার দক্ষতা আয়ত্ত করতে পারবেন।
অনুশীলন হিসেবে, ই-মেইলের মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ফরমাল রীতিতে তাদের মেইল করুন এবং ফরমাল রীতিতে তাদের মেইলের উত্তর দিন। এর মাধ্যমে সহজে এই দক্ষতা আয়ত্ত করতে পারবেন।
গুড লাক।
Very Informative