তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতি বিল গেটসের ১০ টি উপদেশ

কিভাবে বিল গেটস সফল উদ্যোক্তা হয়েছিলেন ?

বিল গেটসের নাম শুনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুস্কিল। বিল গেটস বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ও সম্মানিত ধনকুবেরদের একজন। তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা একজন উদ্যোক্তা ও পথিকৃৎ।

অনেক তরুণ উদ্যোক্তা তাদের বিজনেস জার্নিতে বিল গেটসের উপদেশ খুঁজে থাকে। এই আর্টিকেলে আমরা সেই বিষ্ময়কর  ব্যক্তির কিছু উপদেশ তুলে ধরব যিনি ১৯৭৪ সালে হার্ভার্ড ছেড়ে দেওয়ার পর তার নিজস্ব সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে প্রযুক্তিবিশ্বকে চিরতরের মতো পাল্টে দিয়েছিলেন।

তিনি একজন ব্যবসায়িক মহারথী, লেখক, সমাজসেবী, এবং মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও তার জীবনে আরো অনেক বড় বড় অর্জন রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না।

আরও পড়ুনঃ যে কোন কাজে মনোযোগ ধরে রাখার ৫টি উপায়

রোগ প্রতিরোধ, শিক্ষার বিস্তার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা’র মতো অনেক মানবিক কারণে উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে তিনি কখনো দ্বিধাবোধ করেননি।

এখনো তিনি তার অভিজ্ঞতা দিয়ে বিশ্বকে সাহায্য করে যাচ্ছেন, যে অভিজ্ঞতা তিনি বহু দশকের বানিজ্যিক জীবন থেকে অর্জন করেছেন। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে তরুণ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তার দেওয়া এইসব উপদেশ তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনেক সাহায্য করবে।

কারণ সফল হবার জন্য সব আগে তাদের থেকেই শিখতে হবে যারা নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিল গেটসের মতো একজন মেন্টর যেকোনো ব্যবসায়ীর জন্য একটা আশীর্বাদ হবে কিন্তু সেরকম কাউকে সশরীরে পাশে পাওয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।

বিল গেটসের মাঝে ছিল অসাধারণ সৃজনশীলতা, করেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম। যার মাধ্যমে তৈরি করেছে সম্পদের এক বিশাল সাম্রাজ্য।

আর এই ব্যবসায়িক জীবনে অর্জন করেছেন বহু অমূল্য অভিজ্ঞতা। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য তার অভিজ্ঞতা থেকে দেওয়া ১০ টি উপদেশ আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি যা আপনার এই দূর্গম পথকে অনেকটাই সহজ করে দেবে।

১) সবসময় শিখে যেতে হবে

বিল গেটস ও তার কাছের বন্ধু ওয়ারেন্ট বাফেট, দু’জনেই বলেছেন যে তাদের সাফল্যের পেছনে কৌতুহল সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে।

যেটা কিনা পুরোপুরি সঠিক কারণ কেবল কৌতুহলী হবার মাধ্যমেই আপনার মাঝে নতুন কিছু জানার আগ্রহ জেগে উঠবে।

আর তারপর সেই অর্জিত জ্ঞানকে আপনি জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কাজে লাগিয়ে সাফল্য ছিনিয়ে আনতে পারবেন। যখন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হবেন আপনাকে সেটার একটা সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।

আর এর ফলে আপনি ভবিষ্যতে আর কখনো সেরকম সমস্যার সম্মুখীন হবেন না। এভাবে যত বেশি সমস্যার সমাধান জানা থাকবে ব্যবসা ততই ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারবেন এবং আপনার প্রোডাক্টিভিটিও ততই বৃদ্ধি পাবে।

২) ব্যর্থতা থেকে শিখুন 

মাইক্রোসফট একদিনে সফলতা পায়নি। তাদের অনেক লম্বা ও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। শুরুতে বিল গেটসও অনেক ভুলত্রুটি করেছেন।

কিন্তু তিনি থেমে যাননি, সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে লড়াই চালিয়ে গেছেন। ব্যর্থতাকে হাল ছেড়ে দেবার অযুহাত হিসেবে না দেখে নতুন কিছু শেখার অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখেছেন।

তাই বিল গেটস তরুণ উদ্যোক্তাদের ব্যর্থতাকে মেনে নেবার উপদেশ দিয়েছেন, হার মানার বদলে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাবার পরামর্শ দিয়েছেন।

ব্যর্থতা মোকাবেলা করার এই অ্যাপ্রোচ তার এই বিখ্যাত উক্তিতে সবচেয়ে ভালোভাবে ফুটে উঠেছে, “সাফল্যকে উদযাপন করা ভালো, তবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যর্থতা থেকে পাওয়া শিক্ষাকে মনে রাখা।”

বিল গেটসের মতে ব্যর্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটা আপনাকে পিছে ফিরে গিয়ে নিজের ভুল-ত্রুটি ও ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করতে বাধ্য করবে।

ফলস্বরূপ, আপনি এই সমস্যা সংশোধন করার মাধ্যমে একই ভুল পুনরায় করা থেকে নিজেকে আটকাতে পারবেন। তাই ব্যর্থতাকে হার মানার কারণ হিসেবে না দেখে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখুন।

৩) ঝুঁকি নিতে শিখুন

ব্যবসা হচ্ছে কয়েকটি নিয়ম ও প্রচুর ঝুঁকির সঙ্গে একটি টাকার খেলা”

-বিল গেটস।

তরুণ উদ্যোক্তাদের নতুন কিছুকে ভয় পাওয়া চলবে না। তাদের নিজের গন্ডির বাইরে যাওয়া শিখতে হবে। বিল গেটসেরর মতে, সাফল্য খুঁজে পাওয়ার অন্যতম সেরা উপায় হচ্ছে নতুন কিছু করা।

তাই নতুন কিছু করার সাহস একজন ব্যবসায়ীর থাকতে হবে। যখন কম্পিউটার সফটওয়্যারের ব্যাপারে মানুষ তেমন কিছুই জানতো না, তখন বিল গেটস তার দৃঢ় বিশ্বাস ও ঝুঁকি নেবার প্রবণতার মাধ্যমে মাইক্রোসফটকে সফল হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল।

“বড় সাফল্য পেতে চাইলে, কখনো কখনো বড় ঝুঁকি নিতেই হবে।” বড় পুরষ্কার লাভ করার উদ্দেশ্যে ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক উদ্যোক্তাদের জন্য বিল গেটসের উপদেশ  অনেক বড় এক অনুপ্রেরণার উৎস।

৪) ধৈর্য ধরুন এবং অধ্যবসায়ী হোন

যেকোনো তরুণ উদ্যোক্তাকে বিল গেটস সব আগে ধৈর্যশীল হবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে যে সাফল্য মাইক্রোসফট অর্জন করেছিল তা পেতে তাদের ৪ বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল।

আপনার কাছে শুধু একটা ভালো আইডিয়া থাকলেই হবে না আপনাকে ধৈর্য ধরে অধ্যবসায়ের সাথে সেটার পিছে লেগে থাকতে হবে।

সাফল্য একদিনে আসবে না এবং বিল গেটস এটা ভালোভাবেই বুঝতেন। যদিও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের প্রথম দিককার ভার্সন গুলো (উইন্ডোজ ১.০, উইন্ডোজ ২.০) খুব একটা ভালো ছিলো না কিন্তু তার অধ্যবসায় উইন্ডোজকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম করে তুলেছিল।

আমরা বর্তমানে বাস করি, কিন্তু ভবিষ্যতে উঠতি টেকনোলজি কীভাবে পরিবর্তন বয়ে আনতে পারে তা নিয়েও ভাবা জরুরি। কাস্টমারের চাহিদা পূরণের জন্য নতুন মার্কেট ট্রেন্ড অ্যাডাপ্ট করার চেষ্টা আপনাকে সর্বদা করে যেতে হবে।

৫) কঠোর পরিশ্রম করুন

বিল গেটস তরুণ উদ্যোক্তাদের কোনো অজুহাত না দেখিয়ে কাজ করে যাবার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন যে, সন্ধ্যায় ও ছুটির দিনে তিনি সেইসব ইমেইলের রিপ্লে দিতেন যেগুলোর রিপ্লে দেবার সময় তিনি দিনে পেতেন না। নিজের কাজের মূল্যায়ন ও পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনা করার জন্য তিনি বছরে দুই সপ্তাহ ছুটিও নিয়ে থাকেন।

নতুন কিছুকে দাঁড় করানো সহজ না। আপনি যখন একটা ব্যবসা শুরু করবেন তখন আপনাকে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি খাটাতে হবে, সেটার ভিত্তিটা মজবুত করা লাগবে।

এসময় অলসতা করলে চলবে না। যেকোনো পণ্য বা সেবা ডেভলপ করার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম দরকার।

৬) সেরা লোকেদের নিয়োগ দিন

সবসময় সেরা লোকেদের খুঁজে বের করে নিয়োগ দিতে হবে, তারপর তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজের উপযোগী করে তুলতে হবে এবং তাদের ধরে রাখার উপায় বের করতে হবে।

সঠিক লোক খুঁজে পেতে সময় লাগে। আপনাকে জানতে হবে যে কাদের ছেড়ে দিতে হবে এবং কাদের ধরে রাখতে হবে।

সংখ্যার চেয়ে মানকে সবসময় বেশি অগ্রাধিকার দিবেন এবং নিজের থেকে যা প্রত্যাশা করেন আপনার কর্মীদের থেকেও সেটাই প্রত্যাশা করবেন।

৭) যত দ্রুত সম্ভব নিজের বস হোন

“যদি নিজের স্বপ্ন গড়তে না পারেন, তাহলে অন্য কেউ তার স্বপ্ন গড়ার জন্য আপনাকে ভাড়া করবে।”

– বিল গেটস

আজীবন অন্যের হয়ে কাজ করে গেলে আপনি কখনোই বড় কেউ হতে পারবেন না। তাই স্বপ্ন পূরণের এই যাত্রাতে অন্যকে অনুসরণ করা বন্ধ করুন এবং এমন কিছু করুন যেন অন্যরা আপনাকে অনুসরণ করা শুরু করে।

বিল গেটস বেশ অল্প বয়সেই তার নিজের কোম্পানির বস হয়েছিলেন, যা তাকে আজকের এই অবস্থানে আসতে সাহায্য করেছে।

আপনি যে ব্যবসাই শুরু করতে চান না কেন, ভয় না পেয়ে আজই নেমে পড়ুন।

পথে অনেক চড়াই-উতরাই আসবে কিন্তু আপনাকে লেগে থাকতে হবে। তবে অন্ধের মতো এতে ঝাঁপিয়ে পড়লে হবে না। আপনাকে অবশ্যই নিজের ব্যবসার বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখতে হবে।

প্রচুর স্ট্যাডি করে তারপর এটাতে নামতে হবে।

৮) জীবনে ব্যালেন্স রক্ষা করুন

কাজই সবকিছু না। কখনোই সেসব জিনিস করা বন্ধ করবেন না যা আপনাকে আনন্দ এনে দেয়। বিল গেটসের জীবন দেখলে লক্ষ্য করবেন যে তিনি বই পড়তে খুব পছন্দ করেন।

কেউ হয়তো এটাও বলতে পারে যে এটা তাঁর জীবনের স্ট্যাডি পিরিয়ড বা এমন একটা সময় যখন তিনি আয়েশ করে বই পড়তে পারেন।

এছাড়াও, তিনি তার পরিবারের সাথে যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন এবং নিজের স্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্যও যথেষ্ট কাজ করেন।

যদি এতদিনেও না বুঝে থাকেন, তাহলে বলে রাখি, পরিবার হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে স্নেহশীল ও সহকারী সঙ্গী। তাই সবসময় নিজের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সময় দিবেন।

৯) নিজের উপর গর্ব করুন

অনেকসময় আমরা আমাদের পুরো জীবন অন্যের সাথে তুলনা করে কাটিয়ে দিই। জন্ম থেকেই আমাদের মাথায় সেটা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

অমুকের মেয়ে পরীক্ষায় অত পেয়েছে, তুমি কেন পাওনি? উমুকের ছেলে ওখানে চাকরি পেয়েছে, তুমি কেন পাওনি? এরকম কথার সাথে আমরা সবাই পরিচিত।

অন্যরা তাদের জীবন নিয়ে কী করছে তা ভাবতে গিয়ে আমরা নিজেরাই কিছু আর করতে পারি না। এজন্যই বিল গেটস বলেছেন, “কখনো নিজেকে অন্য কারো সাথে তুলনা করবে না… সেটা করলে নিজেকে অপমানই করবে।”

অনেক মানুষ এটা ভেবে হতাশ হয়ে যায় যে তারা তাদের অনুপ্রেরণার মানুষটার মতো স্মার্ট, ধনী বা প্রতিভাবান না।

হয়তো এটা ভেবে হতাশ হবেন যে আপনি বিল গেটসের মতো সফল না, কিন্তু আপনাকে এটা মেনে নিতে হবে যে আমরা সবাই আলাদা।

আমাদের সবার আলাদা আলাদা সক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যদি নিজের উপর আত্মবিশ্বাস আনতে পারেন তাহলে সফলতার পথে আরো একধাপ এগিয়ে যাবেন।

১০) জীবন সহজ না

“জীবন সহজ না। সেটা মেনে নিন।”

– বিল গেটস

জীবনে আপনি যতই পরিশ্রম করেন না কেন, এমন কিছু সময় আসবে যখন আপনি যেভাবে চাইবেন সেভাবে সবকিছু হবে না, কারণ জীবনের সবকিছুর উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই।

জীবন চলার পথে অনেক কিছুই আপনাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিবে কিন্তু আপনাকে উঠে দাঁড়াতে হবে। জীবন সহজ না। জীবন একটা পরীক্ষা, এক অনিশ্চিত খেলা, একটা ঝুঁকি।

পড়ে যাবার পর যদি উঠে দাঁড়াতে না পারেন তাহলে আপনি সফলতার যোগ্য না। বিজেতারা জানে জীবন সহজ না আর ফিনিসিং লাইন না ছোঁয়া পর্যন্ত তারা বার বার উঠে দাঁড়ায়।

Don't Miss!

Md. Tota Miah
Md. Tota Miahhttps://totamiah.org
লেখক বর্তমানে রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। এছাড়া তিনি একজন গবেষক, ব্লগার, ফিটনেস, উচ্চতর পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে কাজ করেন। মোঃ তোতা মিয়া দেশের যুবসমাজকে কর্ম উপযোগী করে তোলার সপ্ন দেখেন।

সিভিতে রেফারেন্স লেখার বিস্তারিত নিয়ম!

আপনি যদি একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট হন তাহলে এই আর্টিকেল পুরোটাই পড়া উচিত। কারণ সিভিতে রেফারেন্স নিয়ে এতো সহজ ও তথ্য বহুল লেখা খুব কম...

সিভি ও রিজিউম এর মধ্যে পার্থক্য কী?

আপনি যখন জীবনের প্রথম চাকরির জন্য আবেদন করবেন তখন একটু হলেও ভয় নিশ্চয় পাবেন। চাকরি প্রার্থীদের মনে এই প্রশ্নটা জাগতে পারে যে আবেদনের সময়...

প্রফেশনাল ইমেইল লেখার A to Z নিয়ম কানুন

সঠিক ভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লেখা কেন জরুরী? আপনার এই আর্টিকেলে ক্লিক করা উচিত হয়নি। কারণ সঠিকভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লিখা খুব কঠিন একটা কাজ যা...

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.