যে ৭ টি কারনে আপনার ওজন ও মাংসপেশি বাড়ছে না !

আমার ওজন ও মাসল কেন বাড়ছে না? অন্যদিকে বেশি খাওয়ার ফলে উল্টো পেট বেড়ে চলেছে। এখন কী করা উচিত?

চলুন আমরা কারণ অনুসন্ধান করি। ওজন না বাড়ার প্রাকৃতিক কারণের একটা হতে পারে জেনেটিক বা বংশগত সমস্যা। আবার যাদের দেহে বেশি মাত্রায় মেটাবলিজম সৃষ্টি হয় তাদের ওজন সহজে বাড়ে না।

সারাদিন কাজ করে কী পরিমাণ এনার্জি/ক্যালারি ক্ষয় করেন তার উপরও এটা নির্ভর করে। আপনার ডায়েট থেকে পাওয়া সম্পূর্ণ এনার্জি/ক্যালরি যদি কায়িক শ্রমের মাধ্যমে পুরোপুরি পুড়িয়ে ফেলেন তাহলে আপনার ওজন বাড়বে না বরং কমবে।

আরও পড়ুনঃ

আপনার ওজন ও মাসল বৃদ্ধি থেমে যাওয়ার ৭ সম্ভাব্য কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো।

১) আপনি যথেষ্ট খাচ্ছেন না:

আপনার ওজন ও মাসল না বাড়ার একটা প্রধান কারণ হতে পারে যে আপনি প্রয়োজনের তুলনায় কম খাচ্ছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, হয়তো সঠিক খাবারটা খাচ্ছেন না। নিচে উল্লেখিত খাবার গুলো ডায়েটে যতো বেশি পরিমাণে থাকবে আপনার ওজন ততো দ্রুত বাড়বে-

মাসল ও ওজন বাড়ানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত করা আদর্শ খাবারের লিস্ট:

  • ডিম
  • দুধ
  • কলা
  • মুরগীর বুকের মাংস
  • গরুর মাংস
  • কাঁচা ডাঁটা
  • বাদাম
  • মটর ডাল
  • বঁশের কোড়ল (shoots)
  • ভুট্টা
  • মটরশুঁটি, পালংশাক, ফুলকপি
  • চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ, মাছের লেজ ইত্যাদি।

মাসল ও ওজন বৃদ্ধির জন্য কীভাবে নিজের খাদ্যাভ্যাস ঠিক করতে হবে?

অন্যান্য খাবার গ্রহনের সাথে আপনাকে মাটির নিচে গজানো শাকসবজিও খেতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রত্যহ চারটা আলু অথবা দুটা মিষ্টি আলু খাওয়া উচিত। মিষ্টি আলু বেশি ফলপ্রদ। এছাড়াও জাফরান বাদ দিয়ে আপনি ৬ টা ডিমের সাদা অংশ পর্যন্ত খেতে পারেন।

উপরে উল্লেখিত খাবার গুলোকে আপনার ডায়েটের যতো উপরে সম্ভব স্থান দিতে হবে। ফার্স্ট ফুড, সুগার যুক্ত পানীয় ও খাবার যতো বেশি খাবেন আপনার ওজন প্রাকৃতিকভাবে ততো দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

২) আপনি যথেষ্ট প্রোটিন খান না

শরীরে আয়রণের পরিমাণ বাড়াতে হলে আপনাকে যথেষ্ট প্রোটিন খেতে হবে।কারণ এতে অ্যামিনো এসিড থাকে যা মাসল গড়তে ও মাসল টিস্যু মেরামতে সাহায্য করে।

দৈনিক কী পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত? ফিটনেস এক্সপার্টদের মতে, শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১.৫-২ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন।

এর অর্থ যদি একজন ব্যক্তির ওজন ৬০ কেজি হয় তাহলে মাসল গঠনের জন্য তাকে প্রত্যেকদিন ৬০-৯০ গ্রাম প্রোটিন খেতে হবে। মানে একজন ৯০ কেজির ব্যক্তিকে দৈনিক ১০৯-১৫০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।

তবে মনে রাখুন, সঠিক খাবার বেছে নিতে হবে, যেমন, মাছ, মুরগি, লাল মাংস, ও ডিমে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন থাকে। ধারাবাহিকভাবে প্রোটিন নিতে থাকলে আপনি আপনার গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন।

৩) বেশি কার্ডিও করা

অত্যাধিক পরিমাণে কার্ডিও করলে তা আপনার মাসল বৃদ্ধিকে থামিয়ে দিবে। যদি ফ্যাট কমানোর সাথে মাসল বৃদ্ধি করতে চান তাহলে নিজের ওয়ার্কআউটে HIIT কার্ডিও-কে স্থান দেওয়া উচিত। এই তীব্র ওয়ার্কআউট আপনার হৃদ স্পন্দন বাড়ানোর মাধ্যমে আপনার মাসল বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

৪) আপনি রেগুলার জিমে যান না:

কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে। সাফল্য অর্জনের জন্য ধারাবাহিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিনে কিছুই গড়ে তুলতে পারবেন না।

আপনাকে নিজের লক্ষ্য ও রুটিন ওয়ার্কআউটের সাথে লেগে থাকতে হবে নাহলে দেহ দেরিতে সাড়া দিবে। সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন ওয়ার্কআউট করুন।

একইভাবে, যথাযথ পুষ্টি ও বিশ্রাম গ্রহণের মাধ্যমে নিজের দেহকে ইচ্ছেমতো পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবেন। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা, সবসময় জিমে পড়ে থাকবেন না, মনকে ফ্রেস করার জন্য সপ্তাহে একদিন করে ছুটি নিন।

৫) বেশি চাপ নিচ্ছেন:

অতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে শরীরে অবসাদ সৃষ্টি হয়। সবসময় জিমে থাকার কোনো মানে হয় না।

সপ্তাহে একদিন ছুটি নিন, ঘুরতে যান, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন এবং নিজের ব্যক্তিগত জীবনকেও উপভোগ করুন। উদ্বেগ, অবসাদ, হতাশা  হিউম্যান গ্রোথ হরমোন (HGH) তৈরিতে বাঁধা সৃষ্টি করে। ফলস্বরূপ, মাসল ও ওজন ধারাবাহিকভাবে বেড়ে উঠে না।

৬) আপনি যথেষ্ট ঘুমাচ্ছেন না:

মাসল ও ওজন বৃদ্ধিতে ঘুম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঘুম মূলত HGH ( Human Growth Hormone) এর সাথে জড়িত যা ঘুমন্ত অবস্থায় সবচেয়ে বেশি তৈরি হয়।  মাসল গড়ে তুলতে চাইলে আপনাকে রাতে ৭-৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।

কুইক ফিক্স: বেশিভাগ মাসল গ্রুপের ক্ষেত্রে, সপ্তাহে একটা ট্রেনিং সেশনই যথেষ্ট।  কিছু ছোট মাসল গ্রুপ যেমন ক্যালভ (calves) ও অ্যাবস এর জন্য হয়তো দুবার ট্রেনিং এর প্রয়োজন হবে কিন্তু যদি সপ্তাহে ৫ দিন ওয়ার্কআউট করে থাকেন তাহলে প্রত্যেক সেশনের পর অন্তত ২ দিন রেস্ট নিতে হবে।

৭) জাঙ্ক ফুডের প্রতি আপনি আসক্ত:

অনেকে বলে যে, আমি অনেক খাবার খাই, যেমন ফাস্ট ফুড, ফ্রাইড ফুড, মিষ্টি এবং বাকি সবকিছু। কিন্তু তবুও আমার ওজন বাড়ে না।

প্রশ্নটা যুক্তিসঙ্গত কিন্তু এটা মাথায় রাখুন যে বেশিভাগ মানুষের ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তাদের পেট বৃদ্ধি পায়, যার পিছে দায়ী থাকে ফাস্ট ফুড ও তৈলাক্ত খাবার।

ফাস্ট ফুড বা মিষ্টি আপনার মাসল বাড়াবে না শুধু ফ্যাট বাড়াবে। তাই, এসব ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলা ভালো। এছাড়া, মাদাক ও তামাক দ্রব্য আপনার রক্তবাহিকা, অক্সিজেন সাপ্লাই, ও রিকভারি সিস্টেমকে দুর্বল করে তুলবে ফলে মাসল বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরো সমস্যা সৃষ্টি হবে।

পরিশেষে

সবকিছু গড়ে উঠতে একটা সময় লাগে। একটা গাছ একদিনে বড় হয়ে যায় না।  তেমনি আপনার মাসল ও ওজন বৃদ্ধি করতেও কিছু সময় লাগবে।

এর জন্য আপনাকে ধারাবাহিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। অলসতা করলে চলবে না, হাল ছেড়ে দিলে হবে না। তাই আপনার ডায়েট ও ট্রেনিং এর সাথে উপরে উল্লেখিত টিপস অনুসরণ করুন এবং চেষ্টা চালাতে থাকুন।

Don't Miss!

Abu Sufiyan Taj
Abu Sufiyan Taj
আবু সুফিয়ান তাজ একজন তরুণ উদ্যোক্তা। ফিটনেস নিয়ে তার অসাধারণ আগ্রহ রয়েছে। তাজ বর্তমানে ফিট লাইফ জিমের স্বত্বাধিকারী ও প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছে।

সিভিতে রেফারেন্স লেখার বিস্তারিত নিয়ম!

আপনি যদি একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট হন তাহলে এই আর্টিকেল পুরোটাই পড়া উচিত। কারণ সিভিতে রেফারেন্স নিয়ে এতো সহজ ও তথ্য বহুল লেখা খুব কম...

সিভি ও রিজিউম এর মধ্যে পার্থক্য কী?

আপনি যখন জীবনের প্রথম চাকরির জন্য আবেদন করবেন তখন একটু হলেও ভয় নিশ্চয় পাবেন। চাকরি প্রার্থীদের মনে এই প্রশ্নটা জাগতে পারে যে আবেদনের সময়...

প্রফেশনাল ইমেইল লেখার A to Z নিয়ম কানুন

সঠিক ভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লেখা কেন জরুরী? আপনার এই আর্টিকেলে ক্লিক করা উচিত হয়নি। কারণ সঠিকভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লিখা খুব কঠিন একটা কাজ যা...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.