আপনি কি নিজেকে আগামীর চাকরির বাজারে জন্য যোগ্য করে তুলতে পারছেন?
ভালো চাকরি পাবার জন্য আপনার ভালো দক্ষতা থাকা লাগবে। যদি জানেন চান আগামীর চাকরির বাজারে কোন দক্ষতার সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকবে, তাহলে আপনি একবারে সঠিক জায়গায় এসেছেন।
তবে আগে নিজের হৃদয়কে তিনটা প্রশ্ন করুন এবং দেখুন কী উত্তর আসে।
- স্বপ্নের চাকরি খুঁজছেন?
- চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে চলেছেন?
- চৌকস প্রার্থীতে রূপান্তরিত হবার কথা ভাবছেন?
যদি উপরের তিন প্রশ্নের যেকোনো একটার উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয় তাহলে এই আর্টিকেল আপনার জন্য একেবারে আদর্শ।
আগামীর চাকরীর বাজারের পরিস্থিতি ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট দক্ষতা দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে, এবং তাদের সাথে পাল্টে যাচ্ছে ট্রেন্ড ও ডিমান্ড। প্রতিযোগিতা দিন দিন আরো ভয়ংকর হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুনঃ করোনা পরবর্তী বিশ্বে চাকরীর বাজারে এগিয়ে থাকার সেরা ৮ টি স্কিল
তাই স্মার্টফোনে নিয়মিত অ্যাপ আপডেট করার মতো, নিজের দক্ষতাকেও আপডেট করতে হবে, অন্যথায় এই মহা প্রতিযোগিতার যুগে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।
তাই, এই আর্টিকেলের সাহায্য আমরা আপনার সামনে কিছু অতি প্রয়োজনীয় দক্ষতা তুলে ধরার চেষ্টা করবো। আমাদের রিসার্চ অনুযায়ী আগামীর চাকরির বাজারে এই দক্ষতা গুলো নিকট ভবিষ্যতে সবচেয়ে বেশি কাজে দিবে।
যদি নিচের উল্লেখিত দক্ষতা ব্যাতিত কোনো দক্ষতাকে আপনার গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় তাহলে আমাদের তালিকার সাথে সেটাকেও যুক্ত করে দিতে পারেন।
তবে আমরা আমাদের রিসার্চ অনুযায়ী ৫ টা প্রয়োজনীয় দক্ষতা নিচে তুলে ধরলাম:
১) সমস্যা সমাধান
একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে চাহিদা সম্পূর্ণ দক্ষতা দিয়ে শুরু করা যাক- ‘ ‘সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা’। যার সোজাসুজি অর্থ, মুস্কিল বা জটিল সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া।
আগামীর চাকরির বাজারে অবস্থা সদা-পরিবর্তনশীল এবং অনিশ্চিত যা অনেক অননুুমেয় জটিলতার রূপ নিতে পারে। তাহলে, সেরকম পরিস্থিতিতে আমাদের কী করা উচিত?
বোঝা হয়ে উঠা উচিত নাকি সম্পদ? আসুন আপনাদের এমন একজন সিইও’র গল্প শোনায় যার সমস্যা সমাধানের দক্ষতা সেই কোম্পানিকে কল্পনাতীত সাফল্য এনে দিয়েছে।
আমরা ‘Blendtec” প্রতিষ্ঠানের কথা বলছি। এই কোম্পানি বানিজ্যিক ও আবাসিক (commercial & residential) উভয় ব্লেন্ডার বিক্রি করে থাকে।
১৯৭৫ সালে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তখন মানুষের ব্লেন্ডিং মেশিনের প্রতি খুব বেশি আগ্রহ ছিল না এবং কোম্পানি প্রতি বছর আর্থিক ক্ষতি বহন করে আসছিল।
কিন্তুু কোম্পানির সিইও টম ডিকসন একটা নতুন ও অদ্ভুত আইডিয়া নিয়ে হাজির হন ৷
তারা ইউটিউবে চ্যানেল খুলে যেখানে পাথর, আইফোন, আইপ্যাড থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছু তাদের ব্লেন্ডিং মেশিনে ব্লেন্ড করতে শুরু করে।
এই কৌশল তাদের বিক্রি কল্পনাতীত বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং ২১ কোটি ভিউও এনে দিয়েছিল। মাত্র ৬ বছর ৬ মাসে ৫৩৬ হাজার সাবসক্রাইবারও পেয়ে গিয়েছিল তারা।
২) ব্যবস্থাপনাগত (ম্যানেজেরিয়াল) দক্ষতা
আপনি যে ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করতে চান না কেন, যে ডিপার্টমেন্টই যোগ দিতে চান না কেন, আগামীর চাকরির বাজারে এই দক্ষতা আপনার থাকা লাগবেই।
পরিকল্পনা করা, সংগঠিত করা, নেতৃত্বে দেওয়া ও নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে দায়িত্বের পরিপূর্ণ সমতা গড়ে তোলাকে ভালো ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা বলে।
আরও পড়ুনঃ Covid-19 পরবর্তী সময়ে চাকরি খোঁজার উপায়
প্রায় সব মর্যাদাপূর্ন ও লাভজনক চাকরীর জন্য এই দক্ষতা প্রয়োজন। এমনকি সফল উদ্দোক্তা হয়ে উঠার জন্যও এই দক্ষতা প্রয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয় বা সমতুল্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রমে অংশ নিয়ে থাকে। যেমন, অনুষ্ঠান বা সেমিনার আয়োজন করা।
এ ধরনের অভিজ্ঞতা ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা গড়ে তুলে। মনোবৈজ্ঞানিকরা বলে যে বাচ্চাদের মধ্যে সময় ও দলগত ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়াতে হলে তাদের খেলাধুলায় অংশ নেওয়াতে উৎসাহিত করতে হবে।
একটা কথা প্রচলিত আছে,
সামান্য পিকনিক বা ক্লাস পার্টি আয়োজন করার মাধ্যমে আপনি পরিচালনা কার্যের ব্যাপারে অনেক কিছুই শিখতে পারবেন। ‘রুবাবা দৌলা‘, আমাদের দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত করপোরেট আইকনদের একজন এবং ‘পালস হেলথ কেয়ার’ এর প্রতিষ্ঠাতা।
একটা ইন্টারভিউতে তিনি বলেছিলেন, নিজের করপোরেট ক্যারিয়ারে সৃজনশীলতা ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার উপর তিনি সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন।
এখন একজন উদ্দোক্তা হিসেবে, ব্যবসা চালাতে গিয়ে ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা উনার সবচেয়ে বেশি কাজে আসে।
৩) শেখার মনোভাব
এটা সত্য যে শেখার কোনো শেষ নেই। এটা বলতে গেলে একটা প্রমানিত সত্য।
যেসকল কর্মীদের মাঝে গভীর আগ্রহ ও নতুন কিছু শেখার মনোভাব থাকে তারা অন্যদের চাইতে দ্রুত সাফল্য অর্জন করতে পারে। জীবন্ত কিংবদন্তি বিল গেটসকেই দেখুন।
সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় থাকার পরও বিল গেটস নতুন কিছু শেখা থামাননি।
একটা ইন্টারভিউতে উল্লেখ করেছেন যে তিনি সপ্তাহে অন্তত একটা বই পড়ে থাকেন, ফলস্বরূপ সংখ্যাটা এক বছরে ৪৮-৫০ এবং ৫ বছরে ২৫০ বইতে গিয়ে দাঁড়ায়।
তাই, দিন বা সপ্তাহের সামান্য কিছু সময় নিজের চাকরীর সাথে সংশ্লিষ্ট নতুন দক্ষতা শেখার পিছে ব্যয় করুন এবং ভবিষ্যতে আপনার সামনে অনেক সম্ভাবনার দরজা খুলে যাবে। আগামীর চাকরীর বাজারে এই দক্ষতা ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করবে।
৪) নেগোসিয়েশন এবং কমিউনিকেশন
বর্তমান যুগে ও আসন্ন যুগে, তাদের বেশি চাহিদা থাকবে যাদের ভালো ও কার্যকর কমিউনিকেশন দক্ষতা আছে।
কার্যকরভাবে ও সক্ষমতার সাথে তথ্য অন্য ব্যক্তির নিকট পৌঁছানোর ক্ষমতাকে কমিউনিকেশন দক্ষতা বলে।
বিশ্বাস করুন অথবা না করুন! যারা অন্যকে পরিচালিত করার মাধ্যমে কাজ হাসিল করে নিতে পারে তাদের সফল হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
কর্মক্ষেত্রে সফল কমিউনিকেটর হবার জন্য আমাদের এমন নেতার মতো মানসিকতা থাকতে হবে যে মানুষের অন্তর্নিহিত প্রতিভা খুঁজে বের করতে পারে, যে প্রেরণা দিয়ে তাদের সাফল্যের পথে নিয়ে যেতে পারে।
যেসকল কর্মী ও ম্যানেজারের ভালো মৌখিক ও অ-মৌখিক, একই সাথে লিখিত কমিউনিকেশন দক্ষতা থাকবে তারা মানুষের মধ্যে তথ্যের লেনদেনকে সজজতর করে তুলার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা লাভে বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে।
ইতিহাস সাক্ষী, সফল কমিউনিকেশন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়ের জীবনেই সাফল্য ও সমৃদ্ধি এনে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে।
উদাহরণ হিসেবে টয়োটাকেই ধরুন, শ্রমিক ও উচ্চ পর্যায়ের ম্যানেজমেন্টের মাঝে কার্যকারী কমিউনিকেশন থাকার ফলে তারা মাত্র ৩/৪ মাসের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারের রুমে থাকা গাড়ির ডিজাইনকে বাস্তবে পরিণত করে শোরুমে স্থান দিতে পারে যেখানে একই কাজ করতে বিএমডব্লিউ বা গিএ’র সময় লাগে অন্তত ৩/৪ মাস।
৫) ফ্লেক্সিবিলিটি
অ্যাডাপ্টিভ মনোভাবের গুরুত্ব এতোই বেশি যে আমরা সেটাকে আমাদের আগামী চাকরীর বাজারের তালিকা থেকে বাদ দিতে পারিনি।
১০ বছর আগে চাকরির বাজারের যে অবস্থা ছিল তা এখন পাল্টে গেছে এবং ১০ বছর পরও বর্তমানের সাথে সেটার মিল পাওয়া যাবে না।
করপোরেট সংস্কৃতির নতুন নিয়ম, বিশ্বাস, ও ধারণার সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আপনাকে ও আপনার ক্যারিয়ারকে অনেক উপরে নিয়ে যাবে।
হয়তো সবকিছু আপনার আনুকূল্য হবে না কিন্তু স্মার্ট ব্যক্তিরা সফলতার সাথে সেগুলোকে সামলাবে এবং আপনাকেও সেটাই করতে হবে।
বর্তমান যুগে প্রত্যেক ভালো কোম্পানি প্রার্থীর দক্ষতার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। কেবল শিক্ষাগত যোগ্যতা দিয়ে চাকরি পাওয়া মুস্কিল হয়ে উঠেছে।
শিক্ষার সাথে আপনার দক্ষতাও থাকা লাগবে। চাকরির বাজারে আগে থেকেই অনেক প্রতিযোগিতা ছিল। এই মহামারিতে প্রত্যেক কোম্পানি তাদের খরচ কমানোর চেষ্টা করছে।
ফলস্বরূপ অনেকেই চাকরি হারিয়েছে এবং মহামারি শেষ হতে হতে আরো অনেকেই চাকরি হারাবে। তারাও চাকরির বাজারে ঢুকে পড়বে এবং মহামারি শেষে প্রতিযোগিতা আরো কয়েক গুন বেড়ে যাবে।
তাই যদি আপনার স্বপ্নের চাকরিটা পেতে চান তাহলে এখন থেকেই নিজেকে আগামীর চাকরীর বাজারের জন প্রস্তুত করা শুরু করুন। পড়ালিখার সাথে উপরে উল্লেখিত দক্ষতা গুলো আয়ত্ত করার চেষ্টা করুন।