করোনা পরবর্তী বিশ্বে চাকরীর বাজারে এগিয়ে থাকার সেরা ৮ টি স্কিল

মহামারী পরবর্তী সময়ে চাকরীর ভবিষ্যৎ

লকডাউন সারা পৃথিবীর মানুষের উপর শারীরিক অথবা মানসিকভাবে প্রভাব ফেলছে। চাকুরীজীবী অথবা বেকার, প্রত্যেকেই এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমনকি চাকরীর বাজার ও।

লকডাউন হয়তো সংক্রমণের হাত থেকে আমাদের বাঁচাবে কিন্তু তার বিনিময়ে আমদের জীবিকার বিশাল অংশকে গ্রাস করবে।

এটা ইতিমধ্যেই আমাদেরকে বিশ্ব মন্দার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে, জীবিকার এই ক্ষতি পুষিতে তোলা সম্ভব হবে না, যেটা কিছু ক্ষেত্রে করোনার চাইতেও অনেক বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।

আরও পড়ুনঃ

কোভিড-১৯ মহামারি, যেটা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোকেও অসহায় করে তুলেছে। লকডাউন ও বাধ্যতামূলক সামাজিক দূরত্বের কারণে মানুষ ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে যার ফলে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম থেমে গেছে।

যখন পুরো বিশ্ব কোভিড-১৯ এর প্রভাবের সাথে পাল্লা দেওয়ার চেষ্টা করছে, তখন প্রযুক্তি অনেকভাবেই রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

অনেক কিছুর মধ্যে, এটা মানুষকে ঘরে থেকে কাজ করার ও বিছানাতে শুয়ে থেকেও কেনাকাটা করার সুযোগ করে দিয়েছে।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে  বিভিন্ন দেশের সরকার মহামারি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারেছে ও ভাইরাসের বিস্তার আটকানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হচ্ছে।

১। এডাপ্টাবিলিটি ও ফেক্সিবিলিটি

একটা বিষয় নিশ্চিতভাবে বলা যায়, যেভাবে বিভিন্ন ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে এসেছে তা এখন পাল্টাতে চলেছে। বিশ্ব আগে থেকেই দ্রুত পাল্টে যাচ্ছিলো, কিন্তু এই মহামারি বলতে গেলে সেই আগুনে ঘী ঢেলে দিয়েছে।

“আজীবন থাকবে এমন চাকরীর” সংখ্যা কমে আসবে। যদি কেউ করোনাভাইরাস পরবর্তী বিশ্বে সফল হতে চায় তাহলে তাকে নিত্য-বিবর্তিত হওয়া কর্মস্থলের সাথে মানিয়ে নেওয়া শিখতে হবে এবং ক্রমাগত নিজের স্কিল আপডেট ও রিফ্রেস করার ক্ষমতা রাখতে হবে।

২। প্রযুক্তিগত জ্ঞান

করোনাভাইরাস পরবর্তী পৃথিবীর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার একটা সেরা উপায় হচ্ছে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করা।

কোভিড-১৯ মহামারি কোম্পানিদের ডিজিটাল রূপান্তরকরণের গতিকে দ্রুততর করেছে কারণ তারা ভবিষ্যত প্রাদুর্ভাব ও বিশৃঙ্খলা সামলানোর জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার চেষ্টা করছে।

বাস্তবতা হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা, ইন্টারনেট অব থিংস (IOT), ভার্চুয়াল এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি, রোবোটিক্সের মতো প্রযুক্তি ভবিষ্যত মহামারির বিপক্ষে ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠানকে আরো স্থিতিশীল করে তুলবে এবং

কোম্পানিতে এসব প্রযুক্তির ব্যবহারে যারা অবদান রাখতে পারবে তাদের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। আপনি ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন অথবা একাউন্টিং অফিসে, করোনাভাইরাস পরবর্তী বিশ্বে আপনাকে এসব প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলা শিখতে হবে।

৩। সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনীশক্তি

মহামারিকালীন সময়ে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনের গুরুত্ব আমরা ইতিমধ্যেই উপলব্ধি করেছি। যেসব ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়ালি সার্ভিস প্রদানের পথ বের করতে পেরেছে (যেমনটা অনেক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান করতে পেরেছে) অথবা দ্রুততার সাথে নতুন প্রোডাক্টে শিফট করতে পেরেছে (যেমন মার্সেডিজ এফ-১ রেস কার বানানো থেকে উদ্ভাবনী শ্বাস নেওয়ার যন্ত্রতে শিফট করেছে) তারা ঝড় থেকে নিজেদের কিছুটা হলেও  আড়াল করতে পেরেছে।

করোনাভাইরাস পরবর্তী বিশ্বে উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন হবে যারা নতুন পণ্য ও কার্যপদ্ধতির স্বপ্ব দেখতে পারবে এবং সেগুলোকে বাস্তবে রূপান্তরও করতে পারবে। মানব সৃজনশীলতা অত্যাবশ্যক হয়ে উঠবে।

৪। ক্রিটিক্যাল থিংকিং (গঠনমূলক সমালোচনা)

কোভিড-১৯ দ্বারা সংঘটিত ক্ষতি থেকে আমাদের বিশ্ব অর্থনৈতি পুনর্গঠনের জন্য যে স্কিল অপরিহার্য হয়ে উঠবে সেটা হচ্ছে গঠনমূলক সমালোচনা।

মহামারিকালীন সময়ে আমরা ভুয়া খবর এবং তথ্য ও গবেষণার ভুল উপস্থাপনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে দেখেছি।

অন্যদিকে নেতা, ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান, ও সরকারেরা একে অপরকে দোষারোপ করার চেষ্টায় ব্যস্ত আছে।

যেসকল ব্যক্তিরা এসব বিবিধ উৎস থেকে সফলতার সাথে তথ্য বের করে এনে কোনটা বিশ্বাসযোগ্য এবং কোনটা বিশ্বাসযোগ্য না তা নির্ধারণ করতে পারবে তারা যথেষ্ট মূল্য পাবে। 

সকল তথ্যকে বিশ্বাস করা উচিত না কিন্তু  কোন তথ্যের উপর ভিত্তি করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা জানার জন্য প্রতিষ্ঠানকে গঠনমূলক সমালোচনার উপর নির্ভর করতে হবে।

৫। ডিজিটাল ও কোডিং স্কিল

করোনাভাইরাসের ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল রূপান্তরকরণের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে; ফলস্বরূপ, ডিজিটাল স্কিলধারী (কোডিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং) কর্মীদের গুরুত্ব এখনকার চাইতে অনেক বেশি বেড়ে যাবে।

অর্থনীতিক মন্দা বা মহামারিকালীন সময়ে যখন সরাসরি ব্যবস্যা করা সম্ভব হয় না বা  যথেষ্ট কার্যকারী হয় না, সেরকম সময়ে যেসকল ব্যক্তিরা সফলতার সাথে ডিজিটাল ব্যবস্যা চালিয়ে যেতে পারবে তারা নিয়োগকর্তাদের লিস্টে একেবারে উপরের সারিতে থাকবে।

এবং, বলতে গেলে এখন সব কোম্পানির কোনো না কোনো ডিজিটার রূপ রয়েছে, তাই ডিজিটাল স্কিলকে কাজে লাগানোর সুযোগ অপরিসীম। 

৬। নেতৃত্ব প্রদান

যান্ত্রিক সহায়তা দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে উঠা এক বিশ্ব, যেখানে সুদূর ভবিষ্যতেও হয়তো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাড়ি থেকে কাজ করে যেতে হবে।

এরকম এক বিশ্বে যে পরিবর্তন আসবে তার একটা হচ্ছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক পর্যায়ের মানুষ এমন অবস্থানে থাকবে যেখানে তাদের অন্য কাউকে নেতৃত্ব দিতে হবে।

করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে গিগ অর্থনীতি শুধু বেড়েই যাবে এবং মানুষকে আরো বেশি নিরঙ্কুশ দলের মধ্যে থেকে কাজ করতে হবে যেখানে ভিন্ন ভিন্ন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করবে।

ভালো নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন ব্যক্তিরা, যারা দলের সেরাটা বের করে আনতে পারবে, দলকে অনুপ্রেরণা দিতে পারবে এবং একই সাথে একে অপরকে সহযোগিতা করার জন্য উৎসাহিত করতে পারবে, এমন মানুষের প্রচুর চাহিদা থাকবে।

৭। আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স)

নেতৃত্বের সাথে আড়াআড়িভাবে জড়িত আরেকটা স্কিল হচ্ছে ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স বা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা। অনিশ্চিত বা মুস্কিল সময়ে এই স্কিল নেতৃত্বের চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বলতে নিজের ও অন্যদের আবেগকে বুঝা এবং তা

ম্যানেজ করার ক্ষমতাকে বুঝায়। অন্যকথায় বলা যায়, আবেগীয়

বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে একজন ব্যক্তির সেই মানসিক সামর্থ্য, যার মাধ্যমে সেই ব্যক্তি নিজেকে সুন্দরভাবে ম্যানেজ করতে পারে, আশপাশের অন্যান্যদের সাথে সলফলতার সাথে আচরণ করতে পারে,

অন্যকে মোটিভেট করতে পারে এবং স্বীয় অনুভূতির সঠিক বিচার করে প্রতিদিনের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে

যথার্থভাবে সাড়া দিতে সমর্থ হয়।

প্রত্যেক শিল্পের সকল আকারের প্রতিষ্ঠানে শক্তিশালী আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ব্যক্তির চাহিদা রয়েছে।

৮। জীবনভর শিখে যাওয়া

ওয়াল্ড ইকোনোমিক ফোরাম অনুযায়ী, বর্তমান সময়ে যে স্কিলগুলোকে অপরিহার্য হিসেবে গণ্য করা হয়, মাত্র ৫ বছরের মধ্যে তার ৩৫% পাল্টে যাবে।

করোনাভাইরাস পরবর্তী বিশ্বে সংশ্লিষ্ট থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে: জীবনভর শিখে যাওয়া। যখন বাজারে কম চাকরী থাকবে, যাদের ঝুলিতে এডভান্স ও এক্সপার্ট জব স্কিল থাকবে তাদের বেশি চাহিদা থাকবে এবং চাকরি পেতে তাদের কম স্ট্রাগল করতে হবে।

ভালো খবর হচ্ছে, নিজের স্কিল উন্নত করা এখন আগের চাইতে অনেক বেশি সহজ। করোনাভাইরাস পরবর্তী বিশ্বের জন্য নিজের দক্ষতা গড়ে তুলতে হলে আজকের এই দুনিয়াতে কয়েক বছরের পড়াশোনা বা বিশাল পরিমাণ ঋণের প্রয়োজন হবে না।

অসংখ্য ফ্রি এবং ওপেন অনলাইন কোর্স আছে যা আপনার স্কিল ইপ্রুভ করতে সাহায্য করবে। যে স্কিল ডেভলপ করতে চান তা লিখে Coursera, edX, Udacity, FutureLearn এর মতো প্লাটফর্মে একবার সার্চ দিয়ে দেখুন, সব পেয়ে যাবেন।

Don't Miss!

Md. Tota Miah
Md. Tota Miahhttps://totamiah.org
লেখক বর্তমানে রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। এছাড়া তিনি একজন গবেষক, ব্লগার, ফিটনেস, উচ্চতর পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে কাজ করেন। মোঃ তোতা মিয়া দেশের যুবসমাজকে কর্ম উপযোগী করে তোলার সপ্ন দেখেন।

সিভিতে রেফারেন্স লেখার বিস্তারিত নিয়ম!

আপনি যদি একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট হন তাহলে এই আর্টিকেল পুরোটাই পড়া উচিত। কারণ সিভিতে রেফারেন্স নিয়ে এতো সহজ ও তথ্য বহুল লেখা খুব কম...

সিভি ও রিজিউম এর মধ্যে পার্থক্য কী?

আপনি যখন জীবনের প্রথম চাকরির জন্য আবেদন করবেন তখন একটু হলেও ভয় নিশ্চয় পাবেন। চাকরি প্রার্থীদের মনে এই প্রশ্নটা জাগতে পারে যে আবেদনের সময়...

প্রফেশনাল ইমেইল লেখার A to Z নিয়ম কানুন

সঠিক ভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লেখা কেন জরুরী? আপনার এই আর্টিকেলে ক্লিক করা উচিত হয়নি। কারণ সঠিকভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লিখা খুব কঠিন একটা কাজ যা...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.