ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ কি এবং সিভিতে কিভাবে লিখবেন?

কেন ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ গুরুত্বপূর্ণ?

কথায় আছে, “First Impression is always the Last Impression”. প্রথম দর্শনে বা সাক্ষাতে কাউকে ভালো লাগলে সেটা আর ভোলা যায় না। তেমনি চাকরির ইন্টার্ভিউ বোর্ডে প্রথম সাক্ষাতই সবার নজরে আসার জন্য একটি ভালো সিভির সাথে নির্ভুল ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ থাকা বাঞ্ছনীয়।

সিভির শুরুতেই এই ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ লিখতে হয়। যা হল সিভির প্রারম্ভিক সুচনা, যেখানে আপনি  যোগ্যতা ও দক্ষতার আলোকে ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখবেন।

সিভি বাছাইয়ের সময় যে বা যারা সিভি সিলেক্ট করবে তাদের সামনে এই ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ আপনাকে তুলে ধরতে সাহায্য করবে এবং ইন্টার্ভিউ বোর্ডে কল পেতে ভূমিকা রাখবে।

ক্যারিয়ার অবজেক্টিভের মাধ্যমে একজন চাকরি প্রার্থী তার অর্জিত দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং গুনের বর্ণনা দিয়ে থাকে। এটি একটি ভাল সুযোগ। আর সুযোগ কখনই হাত ছাড়া করা উচিত না।

মনে রাখবেন, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক বা  নিয়োগকারী  সাধারণত যে পরিমাণ সিভি গ্রহণ করেন, তারা প্রতিটিতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড ব্যয় ( ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড)  করতে পারে দেখার জন্য।

তারা পৃষ্ঠার উপরে থেকে নীচে স্ক্যান করে থাকে। আর অবজেক্টিভ উপরে থাকায় সেখানে তাদের নজর বেশী থাকে।

ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ কি?
সিভিতে রেফারেন্স লেখার বিস্তারিত নিয়ম!

ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ সাধারণত কাজের ধরণ এবং সিভির গুরুত্তের উপর নির্ভর করে। অবজেক্টিভ দুই ক্যাটাগরির হয়ে থাকে- একটি হল সাধারণ অবজেক্টিভ। দ্বিতীয়ত হল বিশেষ অবজেক্টিভ। এটি মুলত বিভিন্ন ধরণের চাকরির জন্য একটি কমন অবজেক্টিভ। অপরদিকে বিশেষ চাকরি যেখানে নির্দিষ্ট দক্ষতা চাওয়া হয় তার জন্য ফোকাস করে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ লেখা।

একজন ফ্রেশার কিভাবে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ লিখবে ?

প্রথমত, একজন মানব সম্পদ কর্মী যখন সিভি বাছাই করেন, তখন প্রতিটি সিভিতে তারা ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ বেশ গুরুত্বের সাথে নেন। তারা মনে করেন একজন চাকরি প্রার্থী ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ কতটা গুছিয়ে লিখতে পারেন তার উপর নির্ভর করে তিনি কতটা যোগ্য প্রার্থী।

ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ দুই থেকে তিন লাইনের মধ্যে রাখা উচিত।

এর মধ্যে যে চাকরির পদের জন্য আবেদন করছেন, সেই চাকরিতে আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা কতটা প্রাসঙ্গিক তার উপর জোর দিয়ে খুব সংক্ষেপে লিখুন।

বিশেষ করে যারা নতুন চাকরিতে ঢুকছেন তাদের জন্য অবজেক্টিভ লেখা জরুরি। এক্ষেত্রে, যদি চাকরির পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকে তবে টিম ওয়ার্ক, কম্যিউনিকেশন স্কিল এই ধরনের শব্দ গুলা উল্লেখ করুন।

এখানে কখনই “এই পদে নিজেকে উন্নত করতে চাই” বা “নিজের যোগ্যতা উক্ত পদে উন্নত করার সুযোগ চাই” এই ধরনের কিছু লেখা থেকে বিরত থাকুন। বরং লিখুন “এই পদে নিজের অর্জিত জ্ঞান, যোগ্যতা, দক্ষতার প্রয়োগ করে প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে অবদান ও লক্ষ্য অর্জনে অবদান রাখতে চাই”।

ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ লেখার জন্য যে বিষয় গুলো জানতে হবে-

অবজেক্টিভ সাধারণত দুই থেকে তিন লাইনে লিখতে হয় কিন্তু তার জন্য নিচের কৌশল গুলো কাজে লাগানো যায়।

১। একজন চাকরি প্রার্থীকে শুরুতেই নিজের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। মানে তার সবচেয়ে শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য (strengths) খুঁজে পেতে হবে। কারণ নিয়োগকর্তা একজন স্বপ্রনোদিত বা স্ব-অনুপ্রানিত মানুষকেই তার কর্মক্ষেত্রের জন্য নিয়োগ করতে চান কারন একজন স্ব-অনুপ্রানিত মানুষ যেমন নিজেকে অনুপ্রানিত করে তেমনি তার দলের অন্য সবাইকে অনুপ্রানিত করবার চেষ্টা করে। অতএব আপনি কি করতে পারেন প্রতিষ্ঠানের জন্য, আপনার কি লক্ষ্য আর কি কি ইতিবাচক গুন আছে, সংক্ষেপে তুলে ধরতে হবে।

২। কি পজিশনে আবেদন করছেন তা সঠিক ভাবে উল্লেখ করা এতে নিয়োগকর্তা আপনার প্রতি ইতিবাচক ধারণা পোষণ করবে।

৩। প্রাসঙ্গিক কিছু সফট স্কিল এবং হার্ড স্কিল তুলে ধরতে পারেন যেমন- Skilled in digital communication and marketing.

৪। প্রতিষ্ঠানকে আপনি কি অফার করছেন? মনে রাখতে হবে প্রতিষ্ঠান আপনাকে তখনই ইন্টার্ভিউর জন্য ডাক দেবে যখন সে আপনার ক্যারিয়ার অবজেক্টিভে প্রতিষ্ঠানের জন্য আপনার অফার খুঁজে পাবে। যেমন: “to utilize knowledge and skills to help the company through digital marketing and branding”

৫। প্রতিষ্ঠানে কাজ করা কালীন আপনার টার্গেট কি হবে? এই টার্গেট এমন ভাবে লিখবেন যেন নিয়োগকারী মনে করে যে আপনি প্রতিষ্ঠান নিয়ে ভাবেন।

পরিশেষে, একজন ফ্রেশ গ্রাজুয়েটের চাকরির অনভিজ্ঞতার কারণে অনেকেই ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ লেখার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য পায় না। এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ লিখতে নিচের মুল পয়েন্ট গুলো গুরুত্ব দিতে হবে।

  • নিজের শক্তিশালী গুন খুঁজে বের করা।
  • আপনার অর্জিত লেখাপড়া, এক্সট্রা কারিকুলার কাজ কিভাবে সেই চাকরিতে অবদান রাখতে পারে সেটা উল্লেখ করা।
  • কাজের পজিশন ও কোম্পানির নাম উল্লেখ করা।
  • কেন নিজেকে যোগ্য মনে করছেন তা তুলে ধরা।

ক্যারিয়ার অবজেক্টিভের উদাহরণ

“Organized and motivated candidate capable of communication and networking, working under pressure in all environments. Seeking to join XYZ Corporation as an Administrative Assistant to assist in ensuring good internal communications and budget management.”

আরও পড়ুনঃ যে কারনে আপনার সিভি বা রিজিউম খুলেও দেখা হবে না !

Don't Miss!

Youth Rider
Youth Riderhttps://youthrider.com/
শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজ কে ক্যারিয়ার ও জীবন সম্পর্কে দক্ষ করে তোলার উদ্দেশে এই ব্লগ প্রতিষ্ঠিত। মহামারির প্রাক্বালে বিপুল সংখ্যক মানুষ চাকরি হারায় আর এতে করে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ে। তরুণ এই শক্তি কে যে কর্ম উপযোগী করে তোলার চেষ্টায় ইয়ুথ রাইডার কাজ করে যাবে। আপনি ও এর অংশীদার হতে পারেন।

সিভিতে রেফারেন্স লেখার বিস্তারিত নিয়ম!

আপনি যদি একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট হন তাহলে এই আর্টিকেল পুরোটাই পড়া উচিত। কারণ সিভিতে রেফারেন্স নিয়ে এতো সহজ ও তথ্য বহুল লেখা খুব কম...

সিভি ও রিজিউম এর মধ্যে পার্থক্য কী?

আপনি যখন জীবনের প্রথম চাকরির জন্য আবেদন করবেন তখন একটু হলেও ভয় নিশ্চয় পাবেন। চাকরি প্রার্থীদের মনে এই প্রশ্নটা জাগতে পারে যে আবেদনের সময়...

প্রফেশনাল ইমেইল লেখার A to Z নিয়ম কানুন

সঠিক ভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লেখা কেন জরুরী? আপনার এই আর্টিকেলে ক্লিক করা উচিত হয়নি। কারণ সঠিকভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লিখা খুব কঠিন একটা কাজ যা...

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.