৫ টি ধাপে আপনার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক করুন

জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি, কেন নির্ধারণ করবেন ?

বর্তমান সময়ের তরুণরা জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণের ব্যাপারে কিছুটা হলেও ধারণা রাখে। তাই জীবনে নির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকার ফলে স্নাতকরা তাদের ক্যারিয়ারে পিছিয়ে পড়ছে।

জীবনে স্বপ্ন দেখা জরুরী কারণ স্বপ্ন থেকেই লক্ষ্যের উৎপত্তি। সব বয়সের সকল শ্রেণীর মানুষের ক্ষেত্রে  এটা প্রযোজ্য।

আরও পড়ুনঃ

আপনি পুরো বিশ্ব ঘুরতে চান, ডাক্তার হতে চান, আইনজীবী হতে চান, শিক্ষক হতে চান কিনবা  বই লিখতে চান- আপনার স্বপ্ন থেকেই আপনার জীবনের লক্ষ্য গড়ে উঠবে।

তবে স্বপ্ন আর লক্ষ্যের মাঝে কিছু তফাৎ আছে। কিছু উদাহরণ দিলে হয়তো সেটা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবেন।

স্বপ্ন — আমি অনেক ধনী হতে চাই!

লক্ষ্য — আমি আগামী ১০ বছরের মধ্যে ১ কোটি টাকার মালিক হবো!

স্বপ্ন — আমি পুরো বিশ্ব ঘুরবো!

লক্ষ্য — আমি এই বছর পাঁচটা দেশ ঘুরবো!

স্বপ্ন — আমি পাতলা হতে চাই!

লক্ষ্য — আমি ৩ মাসে ৫ কেজি ওজন কমাবো।

সুনির্দিষ্ট করে কিছু করার বা পাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাকে বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করা।

যতক্ষণ না কোনো কিছুকে সুনির্দিষ্ট করে করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সেটা কল্পনা বা স্বপ্ন হয়ে থেকে যাবে। মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভয় পায় না তবে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে ভয় পায়।

এর মূল কারণ হচ্ছে বিশ্বাস। লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আমি পারব। আপনার লক্ষ্য যদি অসাধ্য না হয়, তাহলে সেটা যতোই বড় বা যতোই কঠিক হোক না কেন, যদি আপনার নিজের উপর বিশ্বাস থাকে থাকলে অবশ্যই সফল হতে পারবেন।

তবে নিজের উপর বিশ্বাস রাখার পাশাপাশি কীভাবে লক্ষ্য স্থির করতে হয় সেই কৌশলও জানতে হবে এবং সেটাই  আমাদের আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু।

আমার মতে মাত্র ৫ টা প্রয়োজনীয় ধাপ অনুসরণ করলেই আপনি জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সঠিক ভাবে নির্ধারণ করতে পারবেন।

তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে এই ৫ স্টেপ আপনাকে নিজের গন্তব্য নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে। নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা ভিসন নির্ধারণের ৫ সহজ স্টেপ নিচে দেওয়া হলো:

স্টেপ ১- আমি আসলে কী চাই তা নিজেকে জিজ্ঞেস করা

নিজেকে জানুন। আপনি জানেন আপনি কে এবং আপনি কী চান তা আপনার চাইতে ভালো আর কেউ বলতে পারবে না।

অন্য কাউকে নিজের সম্ভাবনা ও লক্ষ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার আগে, বসে পড়ুন এবং নিজেকে প্রশ্ন করুন- আমাদের জীবনের লক্ষ্য কী?

আপনি আপনার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কীভাবে পূরণ করতে চান, নির্দিষ্ট সময় পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান, জীবনে কী অর্জন করতে চান, অথবা কী পরিমান সম্পদের মালিক হতে চান, কতটা খ্যাতি অর্জন করতে চান, দেশ ও সমাজের জন্য কী করতে চান, পরিবারের জন্য কী করতে চান, কীভাবে ক্যারিয়ার গড়তে চান- এইসব সিদ্ধান্ত শুধু আপনিই নিতে পারবেন অন্য কেউ আপনার হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে দিবে না।

এই ক্ষণস্থায়ী বিশ্বে, আপনাকে অসাধারণ কিছু করতে হবে নাহলে শতশত ট্রেন্ডিং নিউজের মাঝে আপনি হারিয়ে যাবেন। একইভাবে, আপনি চাইলে একজন এক্সপার্টের সাহায্য নিতে পারেন।

এইজন্য স্টিফেন কভি বলেছেন, “সাফল্যের মই বেয়ে উঠতে শুরু করার আগে, দেখে নেন মইটা সঠিক বিল্ডিংয়ের সাথে ঠেস দেওয়া আছে কি না।”

“অদৃশ্যমানকে দৃশ্যমান করে তোলার প্রথম স্টেপ হচ্ছে লক্ষ্য নির্ধারণ করা।”

—- টনি রবিনস

স্টেপ ২- নিজের লক্ষ্যকে কাগজে গুছিয়ে সাজানো

কেবল জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করলে বা আপনি ডাক্তার হবেন, শিক্ষক হবেন, এসব বন্ধুকে বলে বেড়ালে কোনো লাভ হবে না। সেটা স্পষ্ট হবে না এবং শুধু শুধু সময়ের অপচয় করা হবে।

বলা হয় একটি অগোছালো ডেস্ক একটি অগোছালো মনের পরিচয় দেয়। নিজের মানসিকতাকে গোছানোর সাথে সাথে নিজেদের কাজগুলোও গুছিয়ে ফেলা উচিৎ।

আরও পড়ুনঃ যে কোন কাজে মনোযোগ ধরে রাখার ৫টি উপায়

তেমনিভাবে আপনার পরিকল্পনাও গুছিয়ে ফেলতে হবে এবং তা করার সেরা উপায় হচ্ছে সেটাকে কাগজে কলমে লিখে ফেলা। কোনটা আগে করবেন কোনটা পরে, তা একটা ছক করে সাজিয়ে ফেলা উচিত।

নিজের লক্ষ্য কাগজে লিখার মাধ্যমে আপনি সেটাকে দৃশ্যমান করে তুলে একটা আকার দিতে পারবেন।

লিখার মাধ্যমে আপনি সেটাকে এমন কিছু বানালেন যেটাকে চাইলে ছোঁয়া যায় ও হাতে তুলে নেওয়া যায়। তাই লিখিত লক্ষ্য আপনার সকল বিভ্রান্তি বা অস্পষ্টতাকে সরিয়ে দিবে।

স্টেপ ৩- বাস্তবসম্মত সময়সীমা নির্ধারণ করুন

লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে একটা সুশৃঙ্খল পথ তৈরি করতে হবে।  টাইমলাইন ছাড়া, না থাকবে কোনো সূচনা না থাকবে সমাপ্তি।

লক্ষ্য নির্ধারণের পর নিজের সক্ষমতাকে বিবেচনা করে একটা সময়সীমা ঠিক করুন। সময়সীমাটা অবশ্যই বাস্তবসম্মত হতে হবে।

যেমন ধরা যাক আপনি লক্ষ্য স্থির করলেন যে এক মাসের মধ্যে জাপানিজ ভাষা শিখে ফেলবেন।

কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ ছাড়া প্রায় বিশ্বের সবার জন্য সেটা করা অসম্ভব। তাই আগে আপনাকে নিজের সক্ষমতার সীমা জানতে হবে, আপনি কত সময়ের মধ্যে কতটা অর্জন করতে পারবেন সে ব্যাপারে আগে নিশ্চিত হতে হবে।

তারপর জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের একটা সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। সেটা আপনাকে দ্রুততার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে লক্ষ্য অর্জন করতে সাহায্য করবে।

স্টেপ ৪- কাজ গুলোকে ক্রমানুসারে সাজানো

কয়েক মিনিট সময় নিয়ে ঠিক করুন যে কোন কাজ আগে করতে হবে এবং কোন কাজ পরে করলেও কোনো সমস্যা হবে না।

সময় ও লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য ছোট ছোট লক্ষ্য তৈরি করুন।

ধরুন আপনি ১ বছরের মধ্যে ৩০০ পৃষ্ঠার একটা বই লিখতে চান, এখন আপনাকে সেটাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিতে হবে।

যেমন প্রত্যেক সপ্তাহে কত পৃষ্ঠা লিখতে চান এবং ইডিটিং এর পিছে কত সময় ব্যয় করতে চান।

এভাবে যদি বড় লক্ষ্যকে ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করতে পারেন এবং সেই ছোট ছোট লক্ষ্য গুলো আস্তে আস্তে অর্জন করতে পারেন তাহলে দেখবেন শুরুতে যেটাকে অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল সেটাও সম্ভব হয়ে উঠছে।

প্রত্যেক ধাপের জন্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করুন এবং সময়ের সঙ্গে কাজগুলো দৃশ্যমান করে তুলুন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো বিশাল কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করার মাধ্যমে আপনার জন্য লক্ষ্য অর্জন আরো সহজ হয়ে উঠবে। এর মাধ্যমে আপনার কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা অনেক বৃদ্ধি পাবে।

স্টেপ ৫- পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা

এটাই শেষ ধাপ। যদি আগের সব গুলো স্টেপ ঠিকভাবে কার্যকর করে থাকেন তাহলে এখন সময় হয়েছে আপনার পরিকল্পণাকে বাস্তবে পরিণত করার।

তবে সঙ্গে সঙ্গে ফল আশা করবেন না। ফলাফলের সময় বাস্তবতা ও আপনার সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করে।

একবার লক্ষ্য অর্জনের পথে হাঁটতে শুরু করার পর আপনাকে নিয়মিত নিজের লক্ষ্য নিয়ে ভাবতে হবে এবং নিজের পারফরমেন্সকে রিভিউ করতে হবে।

দিনের শুরুতে ঠিক করুন, আমি আজকে নিজের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পৌঁছানোর জন্য এই এই কাজ করবো এবং সে অনুযায়ী এগুতে থাকুন।

সব সময় লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করার অভ্যাস গড়ে করুন। মানুষের জীবন হচ্ছে আসলে একটা লম্বা যাত্রার মতো এবং  সেই যাত্রায় যদি কোনো লক্ষ্য না থাকে তাহলে যাত্রাটা অর্থহীন হয়ে পড়বে।

আবার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে সেখানে পৌঁছানোর সঠিক পথ খুঁজে সে পথে চলতে না পারলেও জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে।

কাজেই জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পাওয়া আর সেই লক্ষ্যের দিকে সঠিক ভাবে এগিয়ে যাওয়া – দুটোই সমানভাবে জরুরী।

তেমনি আমাদের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্যও প্রথমে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য গড়ে তুলতে হবে।

আরও পড়ুনঃ

Don't Miss!

Md. Tota Miah
Md. Tota Miahhttps://totamiah.org
লেখক বর্তমানে রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। এছাড়া তিনি একজন গবেষক, ব্লগার, ফিটনেস, উচ্চতর পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে কাজ করেন। মোঃ তোতা মিয়া দেশের যুবসমাজকে কর্ম উপযোগী করে তোলার সপ্ন দেখেন।

সিভিতে রেফারেন্স লেখার বিস্তারিত নিয়ম!

আপনি যদি একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট হন তাহলে এই আর্টিকেল পুরোটাই পড়া উচিত। কারণ সিভিতে রেফারেন্স নিয়ে এতো সহজ ও তথ্য বহুল লেখা খুব কম...

সিভি ও রিজিউম এর মধ্যে পার্থক্য কী?

আপনি যখন জীবনের প্রথম চাকরির জন্য আবেদন করবেন তখন একটু হলেও ভয় নিশ্চয় পাবেন। চাকরি প্রার্থীদের মনে এই প্রশ্নটা জাগতে পারে যে আবেদনের সময়...

প্রফেশনাল ইমেইল লেখার A to Z নিয়ম কানুন

সঠিক ভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লেখা কেন জরুরী? আপনার এই আর্টিকেলে ক্লিক করা উচিত হয়নি। কারণ সঠিকভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লিখা খুব কঠিন একটা কাজ যা...