নিজেকে বদলে ফেলার উপায়

৬টি নৈতিক অভ্যাসে জীবন পরিবর্তন করুন

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে সে বাস করে। ন্যায়-অন্যায়, সঙ্গত-অসঙ্গত, উচিত-অনুচিতের বোধ মানুষের জীবনে গোড়া থেকেই বিদ্যমান। মানুষ চিরকালই কিছু ইথিকস মেনে এসেছে। বর্তমান যুগে নিজেকে বদলে ফেলার উপায় বিশেষকরে এই ৬ টা প্রয়োজনীয় ইথিকস নিচে তুলে ধরা হলো:-

আর পড়ুনঃ

১) প্রার্থনা করার আগে বিশ্বাস করুন

প্রার্থনা বা উপাসনা জিনিসটা পুরোই  ব্যক্তিগত ব্যাপার। নিজেকে বদলে ফেলার উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। একজন মানুষ কীভাবে ও কী প্রার্থনা করবে এবং এমনকি দিনে কয়বার প্রার্থনা করবে তা তার ধর্ম বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে।

আমাদের সবার প্রার্থনার ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু আমাদের সবার মাঝে একটা মিল আছে,  আমরা যখন প্রার্থনা করি আমরা মনের গভীরে এই বিশ্বাস রাখি যে আমাদের মনোবাসনা পূর্ণ হবে।

কিন্তু যদি আমাদের সেই বিশ্বাসটা না থাকে তাহলে প্রার্থনা করে কি কোনো লাভ আছে? তাই প্রার্থনা করার আগে বিশ্বাস করতে শিখুন।

২) বলার আগে শুনুতে শিখুন

আমরা সবাই এ কাজটা করি এবং আমরা যতো বড় হই আমাদের কোনো কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনার দক্ষতা ততো বাড়তে থাকে।

তবে সেটা শুধু তখনই ঘটে যখন আমরা সেটাকে ঘটতে দিই। সৃষ্টিকর্তা  আমাদের দুটা কান ও একটা মুখ দেওয়ার মাধ্যমে হয়তো এই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে আমাদের ভালো শ্রোতা হবার চেষ্টা করা উচিত।

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, কী বলা হচ্ছে তার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার বদলে, আমরা লাফিয়ে পড়ে নিজেদের মতামত জানানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে যাই।

এমনকি অনেকে বক্তাকে তার কথা পুরোপুরি শেষ করারও সুযোগ দায় না, তার কথার মাঝেই বাঁধা দিয়ে বসে। এটা উচিত না। নিজেকে বদলে ফেলার উপায় গুলোর মধ্যে সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত। বক্তাতে তার পুরো কথা শেষ করতে দেওয়া উচিত। তারপর নিজেদের অভিব্যক্তি জানানো উচিত।

৩) খরচ করার আগে আয় করুন

এটা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা বেঁচে থাকার জন্য এখনো অন্যের উপর নির্ভর করে এবং এই আশা নিয়ে চলে যে অন্যরা তাদের প্রত্যেক চাহিদা পূরণের জন্য অর্থ সরবরাহ করবে।

যে ব্যক্তি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন রাত পরিশ্রম করে অর্থটা আয় করে আনে, এরকম লোকেরা সেই ব্যক্তি ও সেই আয়কে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে।

যতোদিন নিজে সেটা আয় করতে না শিখবেন ততোদিন সেটার প্রকৃত মূল্য কীভাবে বুঝবেন? যখন নিজে কিছু আয় করার চেষ্টা করবেন তখন নিজে থেকেই অন্যের সম্পদ ও আয়কে শ্রদ্ধা করা শিখে যাবেন।

৪) লিখা বা বলার আগে ভাবতে শিখুন

অন্যভাবে বলতে গেলে, মুখ খোলার আগে ভাবুন সেটা দিয়ে কী বেরিয়ে আসবে। আমাদের কথা মানুষকে কষ্ট দিতে পারে, সেটাকে আমাদের বিপক্ষে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই মুখ খোলার আগে নিজের মস্তিক খোলা জরুরি অর্থাৎ সবসময় ভেবে কথা বলা উচিত।

কী বলতে চলেছেন সে ব্যাপারে যদি ধারণা না থাকে অথবা না ভেবে কথা বলার জন্য যদি মাঝেমাঝেই ঝামেলায় পড়েন, তাহলে হয়তো পুনরায় ভেবে দেখার সময় হয়েছে।

লেখকদের ক্ষেত্রে, আপনার শব্দ অন্য মানুষের ও তাদের সম্মানের কী ক্ষতি করতে পারে তা বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বলতে পারেন যে আপনার ফ্রিডম অব স্পীচ বা যা ইচ্ছে তা বলার স্বাধীনতা রয়েছে কিন্তু এখানে স্বাধীনতা শব্দটার সাথে দায়িত্ববোধ শব্দটা আড়াআড়িভাবে জড়িত।

কিছু জিনিস আছে যা না লিখা বা না বলাই ভালো। তাই আপনাকে বলার আগে ভেবে নিতে হবে। মনে রাখবেন একবার মুখ থেকে যা বের হবে তা আর কখনো ফিরিয়ে নিতে পারবেব না।

৫) হার মানার আগে চেষ্টা করুন

নিজেকে বদলে ফেলার উপায় গুলোর মধ্যে এটা আমার খুব পছন্দ। আমি এক সময় চেষ্টা না করেই হার মেনে নিতাম। মনের ভেতর একটা নেতিবাচক আওয়াজ হয়তো ফিসফিস  করে বলবে, “কী লাভ? এমনিতেও ব্যর্থ হবে!” কিন্তু চেষ্টা না করা পর্যন্ত সেটা জানবেন কীভাবে?

আমি পেশায় শিক্ষক, বহু ছাত্রের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় আমার।

যখন দেখি আমার কোনো ছাত্র চেষ্টা না করেই হাল ছেড়ে দিচ্ছে, তা সেটা জীবনে হোক না পড়ালিখায়, আমি তাদের সবসময় এই কথাটা বলি, “যদি চেষ্টায় না করো তাহলে জানবে কীভাবে যে তুমি সফল হতে পারবে কি না?”

৬) মরার আগে বাঁচতে শিখুন

I went to the woods because

I wanted to live deliberately…

I wanted to live deep and

suck out all the marrow of life!

To put to rout all that was not life…

And now, when I came to die,

discover that I had not lived…

—-Henry David Thoreau

সেরাটা আমি শেষের জন্য রেখেছি। এটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জোগায়। যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে আনন্দময় ও উপভোগ্য তবে দায়িত্বশীল জীবন যাপনের একটা পথ আছে তাহলে আপনার সে পথে যাওয়া উচিত।

জীবন যে বিষন্ন ও ভয়ানক হবে এমন কোনো কথা নেই, এটা মজাদারও হতে পারে। Life is what you make it. Always has been, always will be.

এই সব প্রাথমিক ইথিকস (নীতিশাস্ত্র) সম্পর্কে ভেবে দেখুন এবং যত্নসহকারে এগুলোকে নিজের জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন।

দেখবেন জীবন অনেক বেশি অর্থপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যদি নিজের মূল্যবোধ ঠিক রাখতে পারেন তাহলে পুরষ্কার হিসেবে আশা ও সুখানুভব লাভ করবেন।

এই ধরণের ইথিকসকে নিজের জীবনে প্রয়োগ করার পথ খুঁজে বের করুন এবং নিজের মতো করে বাঁচতে শিখুন।আশা করি নিজেকে বদলে ফেলার উপায় গুলো আপনাদের কিছুটা হলেও জীবন পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে।

Don't Miss!

Md. Tota Miah
Md. Tota Miahhttps://totamiah.org
লেখক বর্তমানে রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। এছাড়া তিনি একজন গবেষক, ব্লগার, ফিটনেস, উচ্চতর পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে কাজ করেন। মোঃ তোতা মিয়া দেশের যুবসমাজকে কর্ম উপযোগী করে তোলার সপ্ন দেখেন।

সিভিতে রেফারেন্স লেখার বিস্তারিত নিয়ম!

আপনি যদি একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট হন তাহলে এই আর্টিকেল পুরোটাই পড়া উচিত। কারণ সিভিতে রেফারেন্স নিয়ে এতো সহজ ও তথ্য বহুল লেখা খুব কম...

সিভি ও রিজিউম এর মধ্যে পার্থক্য কী?

আপনি যখন জীবনের প্রথম চাকরির জন্য আবেদন করবেন তখন একটু হলেও ভয় নিশ্চয় পাবেন। চাকরি প্রার্থীদের মনে এই প্রশ্নটা জাগতে পারে যে আবেদনের সময়...

প্রফেশনাল ইমেইল লেখার A to Z নিয়ম কানুন

সঠিক ভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লেখা কেন জরুরী? আপনার এই আর্টিকেলে ক্লিক করা উচিত হয়নি। কারণ সঠিকভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লিখা খুব কঠিন একটা কাজ যা...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.