কিভাবে ব্যক্তিগত সীমা নির্ধারণ করে অন্যকে খুশি রেখে চলা বন্ধ করবেন?

অন্যকে খুশি রাখা কি আপনার দায়িত্ব?

আপনি কি সবার মন রক্ষা করে চলার চেষ্টা করেন? অন্যের চাওয়াকে নিজের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেন? অন্যের অনুভূতির জন্য নিজেকে দায়ী ভাবেন? ব্যক্তিগত সীমা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন তা ভেবেছেন?

যদি এগুলোর উত্তর হ্যাঁ হয়ে থাকে, তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতেই এসেছেন। হয়তো আপনি কাউকে “না” বলতে পারেন না বা জানেন না কখন অন্যের মন রাখার প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।

এ ধরনের সমস্যার যদি দ্রুত সমাধান না করা হয় তাহলে সেটা আপনার ব্যক্তিগত জীবন ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

বেশিরভাগ মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে, সম্পর্কে বা কর্মক্ষেত্রে বাউন্ডারি সেট করতে পারে না৷ ফলস্বরূপ তারা অন্যকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করতে গিয়ে নিজের উপর হতাশ হয়ে পড়ে।

কেন ব্যক্তিগত সীমা বা বাউন্ডারি সেট করব?

আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা কিছু না ভেবেই সবসময় অন্যকে খুশি করার চেষ্টা করে। এটা ঘটে কারণ আমরা না বলতে ভয় পাই।

আমরা ভাবি যে না বললে তার নজরে আমি খারাপ হয়ে যাব, সে আমাকে আর মর্যাদা দিবে না। ব্যক্তিগত সীমা বা বাউন্ডারি সেট করার পদ্ধতির ব্যাপারে জানার আগে আপনাকে জানতে হবে বাউন্ডারি জিনিসটা কী এবং কীভাবে সেটা আপনার প্রত্যাশা, চাহিদা ও মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। বাউন্ডারি সেট করা মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনঃ শরীর ও মনের সুস্থতায় যোগব্যায়ামের ৬ টি সুবিধা

এটা ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যক্তিগত সীমা নির্ধারণ ফিজিক্যাল হতে পারে বা ইমোশনাল, আর সেটা পরিবর্তনশীল বা অপরিবর্তনশীল হতে পারে। হেলথি বাউন্ডারি সাধারণত এই দুটোর মাঝামাঝিতে পড়ে।

অন্যরা আপনাকে কীভাবে ট্রিট করতে পারবে, পার্সোনাল বাউন্ডারি সেট করার মাধ্যমে আপনি নিজেই সেটা ঠিক করে দিতে পারবেন।

পার্সোনাল বাউন্ডারি বা ব্যক্তিগত সীমা হচ্ছে কিছু গাইডলাইন, নিয়ম বা সীমাবদ্ধতার এক সমষ্টি। এসব বাউন্ডারি লঙ্ঘন করা হলে আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন তা নির্ধারণ করাও এর অংশ।

কিছু মনোবৈজ্ঞানিকের মতে, পার্সোনাল বাউন্ডারি একজন ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দ এবং সে অন্যদের তার কতটা কাছে আসতে দায় তা নির্ধারণ করার মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করে অন্যদের থেকে তাকে আলাদা করে।

শারিরীক, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক, এবং আধ্যাত্মিক, একই সাথে ধর্মবিশ্বাস, আবেগ, সংস্কার , আত্মমর্যাদাও এর অংশ। শারিরীক ও মানসিক পর্যায়ে সেটা আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা হতে সাহায্য করে।

সেটা ফুটিয়ে তুলে আপনার কাছে কী গ্রহণযোগ্য এবং কী গ্রহণযোগ্য না। যেকোনো সম্পর্কে বাউন্ডারি সেট করা জরুরি।

এই সম্পর্কটা হতে পারে বাবা-মা, সন্তান, বন্ধু কিংবা বসের সাথে। ব্যক্তিগত সীমা বা বাউন্ডারি সেট করা ও সবাইকে খুশি করা বন্ধের ৫ টা উপায় নিচে দেওয়া হলোঃ

১) আত্ম-সচেতনতা

সব আগে আপনাকে আত্ম-সচেতন হতে হবে। আপনাকে নিজেকে ও নিজের সীমাবদ্ধতাকে জানতে হবে।

প্রত্যেক পরিস্থিতিতে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে কোন জিনিসটাকে আমি অগ্রাধিকার দিব, আমার আকাঙ্ক্ষা কী।

এটা আপনাকে প্রায়োরিটি সেট করতে এবং সবসময় নিজেকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। অনেক মানুষ আছে যারা নিজেদের চাহিদা ও প্রত্যাশার ব্যাপারে ভাবতে চায় না।

সেজন্য পরিস্থিতি কখনোই তাদের অনুকূলে যায় না। তাই সব আগে নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে ও জানতে হবে।

২) নিজের সীমাবদ্ধতা জানুন

অপরিচিত ব্যক্তি, পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, এবং ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর সাথে চলার সময় আপনাকে মানসিক, শারিরীক, ও আধ্যাত্মিক বাউন্ডারি পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত করতে হবে। অনেক মানুষই তাদের পার্সোনাল বাউন্ডারির ব্যাপারে অবগত না।

কার কোন কথাতে আপনি রাগ, হতাশা বা অস্বস্তি ফিল করেন তা নীরিক্ষা করে দেখুন।

ধরুন কাছের কোনো বন্ধু অতীতের কোনো ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে আপনার অস্বস্তি লাগে না কিন্তু যদি আপনার কোনো সহকর্মী সেটা জানতে চায় তাহলে আপনি অস্বস্তি ফিল করেন।

আপনাকে সবার জন্য একটা লিমিট ঠিক করতে হবে।

৩) নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন

যদি কেউ আপনাকে কোনো কিছু নিয়ে অনবরত বিরক্ত করতে থাকে তাহলে তাদের মুখের উপর সেটা বলে দিতে হবে।

তারা যা করছে তা যে আপনার পছন্দ হচ্ছে না, তা যদি খুলে না বলেন তাহলে তারা কখনোই সেটা বুঝতে পারবে না।

এমন মানুষ হোন যে কারো কথায় বা কাজে অপমান বোধ করলে সেটা সরাসরি বলে দিতে পারে৷

যদি আপনার কোনোকিছুকে ঠিক না মনে হয় তাহলে যেকোনো মূল্যে সেটাকে এড়িয়ে চলুন। আপনার বাউন্ডারি বা প্রত্যাশার ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে অন্যদের জানিয়ে দিন।

অতিরিক্ত ব্যখ্যা করে বলা, বা অন্যকে দোষারোপ করার দরকার নেই।

৪) নিজেকে জাহির করুন

মনে মনে বাউন্ডারি তো সৃষ্টি করে ফেলেছেন কিন্তু সেটাকে কার্যকরও তো করা লাগবে। কেউ বাউন্ডারি ক্রস করলে সেটা তাকে জানানো লাগবে।

জীবনের ছোট ছোট সিচুয়েশনে এটাকে প্রয়োগ করতে হবে। কিছু উদাহরণ দিইঃ

• রেস্তোরাঁয় কি আপনাকে ভুল খাবার দেওয়া হয়েছে? তাদের জিজ্ঞেস করুন আপনি কী অর্ডার করেছিলেন।

• দোকানদার কি আপনার কাছে ভুল করে বেশি টাকা নিয়ে ফেলেছে? তাদের ভুলটা ঠিক করতে বলুন।

• কোনো বন্ধু কি অনবরত এমন কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছে যা আপনার পছন্দ না? তাকে সরাসরি বলে দেন যে আপনি সেটা নিয়ে কথা বলতে চান না।

• আপনার অফিসের সহকর্মী কি আপনার উপর তার কাজ চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে? তাকে মনে করিয়ে দিন যে কাজটা তার, আপনি নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন।

৫) সবাইকে খুশি করতে পারবেন না এটা মেনে নিন

প্রত্যেক মানুষের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আপনি একবারে সবাইকে খুশি করতে পারবেন না। কিন্তু আপনি নিজেকে খুশি করতে পারবেন।

তাই নিজের চিন্তাধারাকে পাল্টানোর সময় হয়েছে। অন্যদের খুশি রাখার দায়িত্ব আপনার না। কারণ সেটা পুরোপুরি ব্যক্তিগত একটা জিনিস।

মানুষ আপনাকে ও আপনার কাজকে পছন্দ করতে পারে, তার মানে এই না যে তারা আপনার কারণে জীবনে খুশি হয়ে উঠছে।

Don't Miss!

Md. Tota Miah
Md. Tota Miahhttps://totamiah.org
লেখক বর্তমানে রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। এছাড়া তিনি একজন গবেষক, ব্লগার, ফিটনেস, উচ্চতর পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে কাজ করেন। মোঃ তোতা মিয়া দেশের যুবসমাজকে কর্ম উপযোগী করে তোলার সপ্ন দেখেন।

সিভিতে রেফারেন্স লেখার বিস্তারিত নিয়ম!

আপনি যদি একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট হন তাহলে এই আর্টিকেল পুরোটাই পড়া উচিত। কারণ সিভিতে রেফারেন্স নিয়ে এতো সহজ ও তথ্য বহুল লেখা খুব কম...

সিভি ও রিজিউম এর মধ্যে পার্থক্য কী?

আপনি যখন জীবনের প্রথম চাকরির জন্য আবেদন করবেন তখন একটু হলেও ভয় নিশ্চয় পাবেন। চাকরি প্রার্থীদের মনে এই প্রশ্নটা জাগতে পারে যে আবেদনের সময়...

প্রফেশনাল ইমেইল লেখার A to Z নিয়ম কানুন

সঠিক ভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লেখা কেন জরুরী? আপনার এই আর্টিকেলে ক্লিক করা উচিত হয়নি। কারণ সঠিকভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লিখা খুব কঠিন একটা কাজ যা...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.