ভালো কর্মীরা কেন চাকরি ছেড়ে দেয়?

ভালো কর্মী ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ গুলো কি কি?

একটা প্রতিষ্ঠানের বস হিসেবে আপনার দায়িত্ব হবে সেখানে ভালো কর্মীদের ধরে রাখা। যদি আপনার ভালো কর্মীরা কাজ শুরুর কয়েক মাস পরেই কাজ ছেড়ে দেয় তাহলে সেটা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো হবে না।

প্রত্যেকটা নতুন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজের উপযোগী করে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠানকে অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয়।

এখন যদি সেই কর্মী কয়েক মাস পরেই কাজ ছেড়ে দেয় তাহলে তার পরিবর্তে যাকে নেওয়া হবে তাকে আবার নতুন করে অর্থ ও সময় ব্যয় করে কাজ শেখাতে হবে।

আরও পড়ুনঃ সফল ক্যারিয়ার গড়ার ৫ টি টিপস

এটা করতে গিয়ে আপনার প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যেন ভালো কর্মীরা আপনার প্রতিষ্ঠানে লম্বা সময় থাকে।

কিন্তু কর্মীরা কখন কাজ ছাড়ে? একটা কথা প্রচলিত আছে যে, মানুষ কাজ ছাড়ে না, তারা বস ছাড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রে করা এক জরিপে দেখা গেছে, চাকরিজীবীদের মধ্যে ৭৪% তাদের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট না আর ৩১% এর কারণ হিসেবে বলেছে, তারা তাদের বসকে পছন্দ করে না। ৩৫% অফিসের ভেতরের রাজনীতিকে দায়ী করেছে আর সবচেয়ে বেশি, ৪৩% বলেছে যে তারা তাদের কাজের জন্য স্বীকৃতি পায় না (সূত্র: ফোর্বস ম্যাগাজিন)। বাংলাদেশেও এ চিত্রটা খুব আলাদা নয়।

কেউই একটা ভালো কাজ ছেড়ে যেতে চায় না। কিন্তু মনের মতো পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা না পেলে একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় কাজ করা খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে চাকরি ছাড়ার পেছনে যথেষ্ট বেতন না পাওয়াকে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে বলা যায়, ক্যারিয়ারে অগ্রগতি করার সুযোগ না থাকাটা।

চাকরি ছাড়ার আরো কিছু প্রধান কারণ হচ্ছে— বসের সাথে সম্পর্ক ভালো না হওয়া, কাজটা চ্যালেঞ্জিং না হওয়া, নতুন কিছু শেখার সুযোগ না থাকা, বেতন-ভাতা তুলনামূলক ভালো না হওয়া, কাজ আর ব্যক্তিগত জীবনের সমন্বয় না থাকা।

একজন কর্মী চাইবে যে তার ম্যানেজার বা লিডার তার চাকরিকে অগ্রাধিকার দিক, তাকে সম্মান করুক। যাতে সে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করে সেই কাজ থেকে আত্মতৃপ্তি ভা করতে পারে।

ভালো কর্মীরা যে ৭ টি কারনে চাকরি ছেড়ে দেয়!

ভালো কর্মীরা এক চাকরি থেকে অন্যত্র কেন চলে যাই?

কেন ভালো কর্মীরা তাদের চাকরি ছেড়ে দায় তার কিছু কারণ নিয়ে আমরা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করব:

১) সঠিক মূল্যায়ন না পাওয়া

প্রতিষ্ঠানে কাজ করা কর্মীরাও মানুষ।  স্বভাবতই আরো প্রোডাক্টিভ হবার জন্য তারা মর্যাদা ও অনুপ্রেরণা খুঁজে। ভালো কর্মীরা দক্ষ ও সৃজনশীল হয়ে থাকে।

কাজ থেকে আত্মতৃপ্তি লাভ করার পরও তারা অসম্মান বোধ করতে পারে যদি তাদের বস কাজের সঠিক মূল্যায়ন না করে। যেসকল কর্মীরা তাদের ভালো কাজের জন্য স্বীকৃতি পায় না তাদের চাকরি ছেড়ে দেবার হার অনেক বেশি হয়।

আরও পড়তে পারেনঃ কর্মক্ষেত্রে সফলতার ১০ টি উপায়

তাহলে কীভাবে একজন বস তার কর্মীদের কাজকে স্বীকৃতি দিবে? তেমন কিছু করা লাগবে না, কিছু প্রসংশা,  বোনাস, প্রমোশন দিলেই কাজ হবে। অনেক সময়, কর্মীরা শুধু তাদের প্রফিট ও প্রোডাক্টিভিটির পরোয়া করে।

তাই তাদের আর্থিকভাবেও পুরষ্কৃত করতে হবে। হ্যাঁ, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই অনেক বাধাবিপত্তির মাঝ দিয়ে যায় কিন্তু কখনোই কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করা যাবে না। কখনোই আপনার কর্মীদের মনে এই ধারণা যেন না জন্মায় যে প্রতিষ্ঠান তাদের পরোয়া করে না।

২) যদি তারা যথাযথ বেতন না পায়

কাজ করার পেছনে অন্যতম মূখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে টাকা। বেশিরভাগ মানুষ জীবিকা অর্জনের জন্যই কাজ করে। এখন যদি আপনার কর্মীরা দেখে যে তাদের কাজের বিনিময়ে তারা যথাযথ বেতন  পাচ্ছে না তাহলে সুযোগ পেলেই তারা কাজ ছেড়ে দিবে।

তাই একজন প্রাতিষ্ঠানিক লিডারকে তার কর্মীদের যথাযথ বেতন দিতে হবে। তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অন্য কোথাও কী পরিমাণ আয় কর‍তে পারবে সে ব্যাপারে আপনার কর্মীরা যথেষ্ট জ্ঞান রাখে। তাই যদি আপনি তাদের আর্থিকভাবে খুশি রাখতে না পারেন তাহলে তারা আপনার হয়ে কাজ করবে না।

৩) যদি আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজ করার মতো পরিবেশ না থাকে

যদি আপনার প্রতিষ্ঠান কাজ করার জন্য নিরাপদ না হয় তাহলে সেখানে কেউই কাজ করতে চাইবে না। আপনার প্রতিষ্ঠানে কি নারীরা যৌন হয়রানির স্বীকার হয়? সেখানে কি কোনো অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আছে?

কারো প্রতি কি পক্ষপাতিত্ব দেখানো হয়? তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের মাঝে অসন্তোষ ও বৈষম্য সৃষ্টি হবে।

এটা আপনার কর্মীদের প্রোডাক্টিভিটির উপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে এবং পরিশেষে তাদের চাকরি ছাড়তে বাধ্য করবে।

আপনাকে এটা মানতেই হবে যে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ আপনার কর্মীদের আচরণ, মনোভাব ও টিমওয়ার্কে বিশাল তফাত গড়ে দিবে। তাই যদি তারা সেখানে নিজেকে নিরাপদ না মনে করে তাহলে সেখানে কেন থাকবে?

৪) যদি তারা ক্রমবিকাশের সুযোগ না পাই

ভালো কর্মীরা সবসময় তাদের স্কিল সেট ইম্প্রুভ করতে চায়। কিন্তু যদি প্রতিষ্ঠান তাদের সেই সুযোগ না দেয় তাহলে তারা সেখান থেকে চলে যাবে।

যেখানে ক্যারিয়ার ডেভলভ করার সুযোগ পাবে,  নতুন কিছু শেখার সুযোগ পাবে তারা সেখানেই যাবে। দক্ষ ও সৃজনশীল কর্মীরা এমন কোথাও চাকরি করতে চায় না যেখানে তাদের কোনো ভবিষ্যত নেই, প্রমোশন পাবার সম্ভাবনা নেই।

তাই একজন লিডারকে তার কর্মীদের বেড়ে উঠার সু্যোগ দিতে হবে।

৫) যদি তাদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করানো হয়

গবেষণায় দেখা গেছে যে, যখন কেউ সপ্তাহে ৫০ ঘন্টা কাজ করে, তাদের প্রোডাক্টিভিটি কমতে শুরু করে। তাই কোনো সমস্যা দেখা দিলেই সেটা নিয়ে আপনার সেরা কর্মীর কাছে চলে যাবেন না।

একজন কর্মী যে কাজ করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকে, সে সকল ম্যানেজারের কাছেই প্রসংশা পাবার যোগ্য। কিন্তু ম্যানেজারেরা অনেক সময় বেশি ফল লাভের আশায় তাদের সেরা পারফর্মারকে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করানোর ভুলটা করে থাকে। সেটা করতে গিয়ে তাদের একেবারে নিঃশেষ করে ফেলে।

৬) যদি তাদের যথেষ্ট কদর না করা হয়

যদি কর্মস্থলে আপনি কোনো মূল্য বা কদর না পান তাহলে আপনি কি সেখানে লম্বা সময় থাকতে চাইবেন? না, আপনি সেখানে বেশিদিন থাকতে চাইবেন না।

যারা বহু বছর পরিশ্রম করে তাদের দক্ষতাকে গড়ে তুলেছে তারা অবশ্যই তাদের প্রচেষ্টার জন্য মূল্যায়িত হতে চাইবে। তিরিশের কোঠায় পা দেওয়া কর্মীদের ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে সত্য। তারা হয়তো ইউনিভার্সিটিতে ৩/৪ বছর ও লাখ লাখ টাকা খরচ করেছে।

কেবল বেতন তাদের খুশি করার জন্য যথেষ্ট না। টিমে বা ডিপার্টমেন্টে তাদের কাজের কদর করতে হবে যাতে তারা সেই কাজ থেকে সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। সেটা তাদের আরো উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে যা দিন শেষে আপনার প্রতিষ্ঠানকে সাফল্য ও সমৃদ্ধি এনে দিবে।

৭) যদি তারা ফ্লেক্সিবিলিটি না পায়

বাড়ি ও অফিস এখন এক হতে শুরু করেছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির বদৌলতে বর্তমানে যে কেউ এখন যেকোনো জায়গা থেকে কাজ করতে সক্ষম।

একবিংশ শতাব্দীর এই কর্মক্ষেত্রে সবাইকে আর ৯ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত ডেস্কে বসে থাকতে হয় না। এটা না বললেও চলবে যে, বাড়িতে থেকে কাজ করার পদ্ধতি গুলো দিন দিন বিবর্ধিত হচ্ছে।

তাই আপনার কর্মীদের ফ্লেক্সিবল হবার সু্যোগ দিতে হবে। আর যেসকল প্রতিষ্ঠান সেটা করতে পারবে তারা অনুগত ও অনুপ্রাণিত কর্মী লাভ করবে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আগাতে পারলে আপনি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বাজারে এগিয়ে থাকতে পারবেন।

আপনি যাই করেন না কেন কিছু লোক আপনার প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যাবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি সেই সংখ্যাটা খুব বড় হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার প্রতিষ্ঠানেই কোথাও সমস্যাটা আছে।

উপরে উল্লেখিত পয়েন্ট গুলো হচ্ছে পরিশ্রমী কর্মীদের চাকরি ছেড়ে দেবার পেছনের মূল কারণ। যদি অন্য কোনো মূখ্য কারণের ব্যাপারে আপনার জানা থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে আমাদের জানাতে ভুলবেন না।

Don't Miss!

Md. Tota Miah
Md. Tota Miahhttps://totamiah.org
লেখক বর্তমানে রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। এছাড়া তিনি একজন গবেষক, ব্লগার, ফিটনেস, উচ্চতর পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে কাজ করেন। মোঃ তোতা মিয়া দেশের যুবসমাজকে কর্ম উপযোগী করে তোলার সপ্ন দেখেন।

সিভিতে রেফারেন্স লেখার বিস্তারিত নিয়ম!

আপনি যদি একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট হন তাহলে এই আর্টিকেল পুরোটাই পড়া উচিত। কারণ সিভিতে রেফারেন্স নিয়ে এতো সহজ ও তথ্য বহুল লেখা খুব কম...

সিভি ও রিজিউম এর মধ্যে পার্থক্য কী?

আপনি যখন জীবনের প্রথম চাকরির জন্য আবেদন করবেন তখন একটু হলেও ভয় নিশ্চয় পাবেন। চাকরি প্রার্থীদের মনে এই প্রশ্নটা জাগতে পারে যে আবেদনের সময়...

প্রফেশনাল ইমেইল লেখার A to Z নিয়ম কানুন

সঠিক ভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লেখা কেন জরুরী? আপনার এই আর্টিকেলে ক্লিক করা উচিত হয়নি। কারণ সঠিকভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লিখা খুব কঠিন একটা কাজ যা...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.