আপনার যোগাযোগ দক্ষতা খারাপ কি-না তা জেনে নিন

যোগাযোগ দক্ষতা বা কমিউনিকেশন স্কিল বলতে কি বুঝায়?

আপনি কি আপনার ভাবনা, আবেগ বা কাজ দ্বারা অন্যদের প্রভাবিত করতে চান? যোগাযোগে ভালো হবার মাধ্যমে  আপনি সেটা করতে পারবেন। আপনার যোগাযোগ দক্ষতা যত ভালো হবে, অন্যের উপর আপনি ততই প্রভাব খাটাতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ কিভাবে ভাল প্রেজেন্টেশান দিবেন?

কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে এই যোগাযোগ দক্ষতা কীভাবে অর্জন করতে হবে? অন্যের দেয়া তথ্য সঠিকভাবে বুঝতে পারা এবং নিজের মনের ভাব অন্যকে সঠিকভাবে বুঝাতে পারার ক্ষমতাকে যোগাযোগ দক্ষতা বা কমিউনিকেশন স্কিল বলে।

হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন কিছু মানুষের সাথে আপনার কথা বলতে ভালো লাগে আবার কিছু মানুষের সাথে কথা বলতে আপনার বিরক্ত লাগে। পার্থক্যটা গড়ে দেয় তাদের যোগাযোগ দক্ষতা।

কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য যোগাযোগ দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয়, সেটা অন্যদের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়িয়ে তুলে।

এছাড়াও ব্যক্তিগত বা সামাজিক জীবন, সব ক্ষেত্রেই যোগাযোগ দক্ষতার প্রয়োজন।  নিয়মিত এটাকে ব্যবহার করতে পারলে আপনার জীবন ও ক্যারিয়ারের প্রতিটা ক্ষেত্রে অগ্রগতি করতে পারবেন।

অনেক মানুষ এ ব্যাপারে অবগত না যে তাদের যোগাযোগ করতে না পারার ব্যর্থতা তাদের ক্যারিয়ারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

যোগাযোগে ভালো হওয়াটা সবার জন্য সহজ নাও হতে পারে। কেউই দাবী করবে না যে সেটা সহজ। কিন্তু সেটা সত্যি হলেও কিছু মানুষ যোগাযোগে অন্যদের চাইতে বেশি ভালো হয়ে থাকে।

কিন্তু যারা যোগাযোগে ভালো না, তাদের বেশিরভাগই বুঝতে পারে না তারা যোগাযোগে কতটা খারাপ।

আপনার যোগাযোগ দক্ষতা খারাপ কি-না তা জেনে নিন:

১) আপনি না ভেবে কথা বলেন-

যেকোনো কথা বলার আগে আপনাকে অবশ্যই ভাবতে হবে৷ নইলে আপনার মুখ দিয়ে যা বেরুবে সেটাকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

আপনি ভুলভাল বলা শুরু করবেন এবং সেটা অপরজনকে বিরক্ত করবে। ফলস্বরূপ তারা আপনাকে এড়িয়ে চলা শুরু করবে৷ একই সাথে কারো সাথে কথা বলার সময় অপর পক্ষকেও ভাবার সময় দিতে হবে।

যদি কারো সাথে কথা বলার সময় তাদের ভাবার সময় না দেন তাহলে সেটা একটা বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। আপনি কথা বলা নিয়ে অতিরিক্ত আছন্ন হয়ে পড়েন বলে হয়তো এটা ঘটে।

যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন করার জন্য আপনাকে বুঝতে হবে কখন কথা বলতে হবে এবং কখন চুপ থাকতে হবে।

তাই, এটা যোগাযোগে দক্ষ হয়ে উঠার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আর যাই হোক, যদি নিজেই অন্যের কথা না বুঝেন তাহলে অন্যরা আপনার কথা কীভাবে বুঝবে? তাই যেকোনো কথা বলার আগে দু’বার ভাবুন এবং অন্যকেও ভাবার সুযোগ দিন।

২) আপনি অন্যের কথা শুনেন না-

আপনি হয়তো অনেক কিছু জানেন, বিশ্বের বিবিধ বিষয়াদি আপনার নখদর্পনে। কথা বলাতেও আপনি খুব ভালো।

কিন্তু কেন যেন অন্যরা আপনার সাথে কথা বলতে পছন্দ করে না৷ তারা আপনার কথা শুনতে চায় না। অনেকে ভাবে কথা বলাতে ভালো হলেই ভালো কমিউনিকেটর হওয়া যায় কিন্তু সেটা ঠিক না।

ভালো কমিউনিকেটর হবার জন্য আপনাকে আগে অন্যের কথা শোনা শিখতে হবে। শুধু অন্যের মুখ থেকে বের হওয়া শব্দগুলো শুনলেই হবে না সেগুলোর প্রতি মনোযোগও দিতে হবে, সেগুলোর অর্থও বুঝতে হবে।

আপনি কী ভাবছেন তা বললেই হবে না, অন্যরা আপনার কথার প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে সেটাও বুঝতে হবে। তাহলে কী করতে হবে আপনাকে?

  • যত্নসহকারে ও আন্তরিকতার সাথে অন্যদের কথা শুনুন।
  • কথার মাঝে বাঁধা না দিয়ে তারা কী বলছে তার উপর মনোযোগ দিন।
  • তাদের সময়, মূল্যবোধ ও ভাবনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন।

অন্যের সাথে যোগাযোগে ভালো হবার জন্য আপনাকে একজন সক্রিয় শ্রোতা হতে হবে। তাদের এটা বুঝতে দিন যে আপনি তাদের কথা শুনতে আগ্রহী।

তাদের কথার জবাবে কী বলবেন তা নিয়ে ভাবতে থাকলে আপনি কখনোই যোগাযোগে দক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন না।

৩) আপনি অন্যের মতকে গুরুত্ব দেন না-

যদিও অন্যের সাথে কথা বলার সময় সৎভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করাটা জরুরি কিন্তু অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি শোনাটাও গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনোকিছুকে দেখা সহজ না, বিশেষত যখন আপনি এমন কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলবেন যার সাথে আপনার আবেগ জড়িয়ে থাকবে।

যদি আপনি শুধু নিজের মতের পরোয়া করেন তাহলে হয়তো আপনার শুধু নিজের সাথেই কথা বলা উচিত।

সবার মত আমাদের সাথে মিলবে না কারণ ভিন্নভিন্ন মানুষ একই জিনিসকে ভিন্নভিন্নভাবে দেখতে পারে।

তাই কথা বলার সময় আমাদের অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।এমনকি যদি সেটা আমাদের মতের বিরুদ্ধে যায় তবুও।

৪) আপনি অন্যের কথার মাঝে বাঁধা দেন-

আপনার কথার মাঝে যদি কেউ বাঁধা দায় তাহলে আপনার কেমন লাগবে? আপনি কি বিরক্ত হবেন না? তাহলে এবার ভাবুন অন্যের কথার মাঝে বাঁধা দিলে তাদের কেমন লাগতে পারে?

সেটা করার মাধ্যমে আপনি পরোক্ষভাবে এটাই বুঝাচ্ছেন যে আপনার মতামত তাদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সত্যটা হচ্ছে আমরা সবাই জেনে বা না-জেনে এটা করে থাকি।

এটা অপর ব্যক্তির জন্য অসম্মানজনক এবং তাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছায় যে তারা যা বলছে তার ব্যাপারে আপনি পরোয়া করেন না বরং আপনি যেটা বলতে চান সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ঘনঘন অন্যের কথায় বাঁধা দেওয়াটা সম্ভবত একজন বাজে স্পিকারের সবচেয়ে বড় লক্ষণ। যে বার বার কথার মাঝে বাঁধা দায় তার সাথে আর যাইহোক কথা চালিয়ে যাওয়া যায় না।

৫) কথা বলতে বলতে অন্য কাজ করেন-

এক সাথে একাধিক কাজ করা একটা বাজে অভ্যাস। এটা করার ফলে মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়, কোনো কাজেই ঠিকমতো মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না।

তবে এটা শুধু আপনার মনোযোগই নষ্ট করে না, আপনার কাজের মানেও অবনতি ঘটায়। তাই এটা জেনে রাখুন যে মাল্টিটাস্কিং স্বাস্থ্য বা প্রোডাক্টিভ কোনোটার জন্যই ভালো না।

যখন আমরা কারো সাথে কথা বলব তখন সেখানে আমাদের দেহ ও মন, দুটোকেই উপস্থিত রাখা লাগবে। এর অর্থ হচ্ছে কারো সাথে কথা বলার সময় ফোনে ব্রাউজ করা বা সেটার ব্যাপারে ভাবা যাবে না।

ধরুন, আপনি আপনার সম্ভাব্য এক ক্লায়েন্টের সাথে কফি খাচ্ছেন এবং ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করছেন। এখন যদি কথার মাঝে ফোন বের করে ফেসবুকে ব্রাউজিং বা ইমেইল চেক করতে শুরু করেন তাহলে সেটা অপরপক্ষের জন্য হবে অসম্মানজনক।

এটা এক ধরণের অভদ্রতাও বটে। এটা করার মাধ্যমে আপনি এটাই বলতে চাচ্ছেন যে তারা আপনার সময় নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ না।

কোনো ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং-এ থাকার সময় আপনার ফোন বা ল্যাপটপ সরিয়ে রাখুন। লাগলে একটা নোটবুক নিয়ে সেটাতে নিজের ভাবনাগুলো লিখুন।

নোট নেওয়ার মাধ্যমে আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরবর্তী সময়ে মনে রাখতে পারবেন।

তাই এটার সুবিধাকে কাজে লাগান ও বৈদ্যুতিক যন্ত্র গুলোকে নিজের থেকে দূরে রাখুন যাতে কাস্টমারের উপর নিজের পরিপূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন।

যেকোনো আলাপে আপনাকে নিজের পরিপূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে।

যদি অন্যের সাথে কথা বলার সময় উপরে উল্লেখিত কাজ গুলো করে থাকেন তাহলে আপনাকে এখনি সেগুলো শোধরাতে হবে।

যোগাযোগ দক্ষতা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। তাই আমাদেরকে এখন থেকেই সেটা গড়ে তোলার পেছনে কাজ করতে হবে।

আপনি কীভাবে আপনার যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন তা কমেন্টে আমাদের জানাতে ভুলবেন না।

Don't Miss!

Md. Tota Miah
Md. Tota Miahhttps://totamiah.org
লেখক বর্তমানে রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। এছাড়া তিনি একজন গবেষক, ব্লগার, ফিটনেস, উচ্চতর পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে কাজ করেন। মোঃ তোতা মিয়া দেশের যুবসমাজকে কর্ম উপযোগী করে তোলার সপ্ন দেখেন।

সিভিতে রেফারেন্স লেখার বিস্তারিত নিয়ম!

আপনি যদি একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট হন তাহলে এই আর্টিকেল পুরোটাই পড়া উচিত। কারণ সিভিতে রেফারেন্স নিয়ে এতো সহজ ও তথ্য বহুল লেখা খুব কম...

সিভি ও রিজিউম এর মধ্যে পার্থক্য কী?

আপনি যখন জীবনের প্রথম চাকরির জন্য আবেদন করবেন তখন একটু হলেও ভয় নিশ্চয় পাবেন। চাকরি প্রার্থীদের মনে এই প্রশ্নটা জাগতে পারে যে আবেদনের সময়...

প্রফেশনাল ইমেইল লেখার A to Z নিয়ম কানুন

সঠিক ভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লেখা কেন জরুরী? আপনার এই আর্টিকেলে ক্লিক করা উচিত হয়নি। কারণ সঠিকভাবে প্রফেশনাল ইমেইল লিখা খুব কঠিন একটা কাজ যা...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.