আপনি যখন জীবনের প্রথম চাকরির জন্য আবেদন করবেন তখন একটু হলেও ভয় নিশ্চয় পাবেন। চাকরি প্রার্থীদের মনে এই প্রশ্নটা জাগতে পারে যে আবেদনের সময় সিভি ব্যবহার করবে নাকি রিজিউম। সিভি ও রিজিউম উভয়ই হচ্ছে প্রোফেসনাল ডকুমেন্ট যেটা আপনার জন্য ইন্টারর্ভিউ পার করে স্বপ্নের চাকরি অর্জন করার সুযোগ গড়ে দিতে পারে।
এদের পার্থক্য মূলত গঠন, বিবরণ, দৈর্ঘ্য এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে। চাকরীর আবেদনের সময় সিভি ও রেজ্যুমে উভয়ই ব্যবহৃত হলেও, তাদের মাঝে কিছু তফাৎ আছে।
আরও পড়ুনঃ করোনা পরবর্তী বিশ্বে চাকরীর বাজারে এগিয়ে থাকার সেরা ৮ টি স্কিল
আমরা সিভি ও রিজিউম এর মধ্যে পার্থক্য নিচে তুলে ধরবো যাতে চাকরীর আবেদন করার সময় কোনটা আপনার বেশি কাজে দিবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
কারিকুলাম ভাইটা (সিভি) কী?
কারিকুলাম ভাইটা একটা ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ কোর্স অফ লাইফ বা ‘জীবন বৃত্তান্ত’। কারিকুলাম ভাইটা হচ্ছে একজন ব্যক্তির পরিচয়, যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রাপ্তি, ইচ্ছা, ইত্যাদির রিপোর্ট।
সিভি লেখায় পৃষ্ঠার সীমাবদ্ধতা নেই তাই স্বাভাবিকভাবেই বিবরণগুলোও হয় তুলনামূলক বিস্তারিত।
সিভিতে একজন ব্যক্তি তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে বিভিন্ন অর্জন যেমন প্রকাশনা, এওয়ার্ড, রিসার্চ ইত্যাদি তুলে ধরে।
একটা সিভিতে সকল তথ্য সময়ানুক্রমিকভাবে সাজানো থাকে অর্থাৎ সর্বশেষ যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন সেটা দিয়ে শুরু করে ক্রমপর্যায়ে বোর্ডের পরীক্ষা পর্যন্ত।
এটা করা হয় যাতে সেটা পড়ে নিয়োগকর্তা সহজেই আবেদনকারীর ক্যারিয়ার সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণা পেতে পারেন।
সিভিতে কী কী থাকতে হবে?
- শিক্ষাগত যোগ্যতা, এছাড়াও থাকবে পেশাগত অভিজ্ঞতা, ডিগ্রি, রিসার্চ, এওয়ার্ড, একাডেমিক প্রকাশনা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ, ভাষা দক্ষতা, কম্পিউটার দক্ষতা, ও অন্যান্য অর্জন।
- আকারে সিভি রেজ্যুমের চাইতে বড় হয় এবং এটাতে বেশি তথ্য দিতে হয়, বিশেষত একাডেমিক ও রিসার্চ সংক্রান্ত তথ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে হয়।
- সিভিতে আবেদনকারী তার দক্ষতা ও যোগ্যতার সামারি দেওয়ার মাধ্যমে দ্রুত ও সংক্ষিপ্ত সময়ে নিয়োগকর্তার নজর কাড়তে পারে।
- বড় বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য প্রচুর আবেদন জমা হয়, তাই মাঝে মাঝে তারা প্রথমে এক পৃষ্ঠার সিভি সামারি চেয়ে থাকে।
- আপনার কারিকুলাম ভাইটাতে নিজের নাম, যোগাযোগের ঠিকানা, শিক্ষা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার উল্লেখ থাকতে হবে। এসব প্রাথমিক তথ্য ছাড়াও, রিসার্চ ও পেশাগত অভিজ্ঞতা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, প্রকাশনা, পেশাদার সমিতি ও লাইসেন্স, এওয়ার্ড এবং যে পদের জন্য আবেদন করছেন তার সাথে সম্পর্কিত যেকোনো প্রয়োজনীয় তথ্য সিভিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
রিজিউম কী?
রিজিউম একটি ফরাসি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে ‘সারমর্ম’। এটা একটা সংক্ষিপ্ত ডকুমেন্ট যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকরির আবেদনপত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
রেজ্যুমে বেশি বড় হয় না, এটা মূলত এক বা দুই পৃষ্ঠার মধ্যে লেখা হয়। রিজিউম উদ্দেশ্য হচ্ছে আবেদনকারীর ওয়ার্ক হিস্টোরি (work history) সম্পর্কে নিয়োগকর্তাকে হালকা ধারণা দেওয়া।
এতে চাকরিদাতা কম সময়ের মধ্যে আবেদনকারী সম্পর্কে ধারণা পান। রেজ্যুমে সময়ানুক্রমিক নাও হতে পারে, এটাতে ব্যক্তির পুরো ক্যারিয়ার ফুটিয়ে তোলার প্রয়োজন নেই।
একটা ভালো রেজ্যুমে নির্দিষ্ট চাকরীর উপর ফোকাস করবে। নির্ধারিত কাজের জন্য দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়ে রেজ্যুমে সাজানো উচিত।
তাই ভিন্ন ভিন্ন চাকরীর জন্য আবেদনকারীকে আলাদাভাবে রেজ্যুমে সাজাতে হবে।
একটা রেজ্যুমেতে কী কী থাকতে হবে?
- যোগাযোগের ঠিকানা
- রেজ্যুমে সামারি বা রেজ্যুমে অবজেক্টিভ
- কর্ম অভিজ্ঞতা
- শিক্ষা
- দক্ষতা
- অতিরিক্ত সেকশন (এওয়ার্ড, কোর্স, প্রকাশনা, সার্টিফিকেট, সম্মেলন, ইত্যাদি)
আশা করি, সিভি ও রিজিউম এর মধ্যকার পার্থক্য পরিষ্কার বুঝতে পেরেছেন। যদি না পেরে থাকেন তাহলে চলুন তাদের মধ্যকার পার্থক্য আরেকবার সংক্ষেপে দেখে আসি।
সিভি ও রিজিউম এর মধ্যে পার্থক্য গুলো এক পলকে দেখে নিনঃ
ফ্যাক্টর | সিভি | রিজিউম |
আকার | পৃষ্ঠার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই | সর্বোচ্চ দুই পৃষ্ঠা |
ফোকাস | ক্যারিয়ার ও একাডেমিক এরিয়াতে ফোকাস করা হয় | ব্যক্তিগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার উপর ফোকাস করা হয় |
কর্ম অভিজ্ঞতা | বিস্তারিতভাবে কর্ম অভিজ্ঞতা উল্লেখ করতে হয় | মূলত উপাধি, সময়কাল, ফার্মের নাম উল্লেখ করতে হয় |
যোগাযোগের ঠিকানা | যোগাযোগের বহু মাধ্যম উল্লেখ করা যেতে পারে | মূলত ফোন নাম্বার এবং ইমেইল যথেষ্ট |
দক্ষতা | সময়ানুক্রমিকভাবে শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করতে হয় | দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় |
একজন নিয়োগকর্তা কেবল সিভি ও রিজিউম এর মধ্যে পার্থক্য পড়ার পেছনে গড়ে ৩.১৪ মিনিট ব্যয় করে। এমনকি প্রতি ৫ জনে ১ একজন শুরুতেই বাদ পড়ে যায় শুধুমাত্র তাদের দুর্বল সিভি বা রেজ্যুমের কারণে।
অতএব, বুঝতেই পারছেন চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে সিভি ও রেজ্যুমে কতটা গুরুত্ব বহন করে। তাই নিজের জন্য সঠিক সিভি বা রেজ্যুমে গঠন করা অত্যন্ত জরুরী।
আর পড়ুনঃ যে কারনে আপনার সিভি বা রিজিউম খুলেও দেখা হবে না !